অধ্যায় ১৩

ঈশ্বর অতিকায় লাল ড্রাগনের সকল সন্ততিকে ঘৃণা করেন, এবং তিনি আরো বেশি ঘৃণা করেন স্বয়ং অতিকায় লাল ড্রাগনকে: এটিই ঈশ্বরের হৃদয়ের অন্তর্গত ক্রোধের উৎস। মনে হয়, ঈশ্বর অতিকায় লাল ড্রাগনের অধিকারভুক্ত সকলকিছুকে ভস্মীভূত করার উদ্দেশ্যে জ্বলন্ত গন্ধকের হ্রদে নিক্ষেপ করতে চান। কখনো কখনো এমনও মনে হয় যে ঈশ্বর অতিকায় লাল ড্রাগনকে স্বহস্তে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে তাঁর হস্ত প্রসারণে অভিলাষী—একমাত্র এভাবেই তাঁর অন্তরের ঘৃণা অপনোদিত হতে পারে। অতিকায় লাল ড্রাগনের গৃহের প্রতিটি মানুষ মনুষ্যত্বহীন পশুবিশেষ, এবং এই কারণেই ঈশ্বর তাঁর রোষকে দৃঢ়ভাবে দমন করে নিম্নলিখিত বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন: “আমার সকল লোকজন ও আমার সকল সন্তানদের মধ্যে, অর্থাৎ, সমগ্র মনুষ্যজাতির মধ্য থেকে আমার মনোনীত মানুষদের মধ্যে, তোমরা নিম্নতম গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।” ঈশ্বর অতিকায় লাল ড্রাগনের সাথে তার নিজের দেশে এক নির্ণায়ক সংগ্রাম আরম্ভ করেছেন, এবং তাঁর পরিকল্পনা যখন ফলপ্রসূ হবে, তখন তিনি তাকে বিনষ্ট করবেন, এবং তাকে আর মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করার বা তাদের আত্মাকে বিধ্বস্ত করার সুযোগ দেবেন না। তাদের পরিত্রাণ করার জন্য ঈশ্বর প্রতিদিন তাঁর নিদ্রিত লোকজনদের আহ্বান করেন, তবু তারা সবাই এক বিহ্বল অবস্থাতেই রয়ে যায়, যেন তারা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। ঈশ্বর যদি এমনকি এক মুহূর্তের জন্যও তাদের জাগ্রত করতে বিরত হন, সবকিছু বেমালুম ভুলে তারা আবার তাদের নিদ্রিত অবস্থায় ফিরে যাবে। মনে হয় যেন তাঁর সমস্ত লোকজন দুই-তৃতীয়াংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তারা তাদের নিজেদের প্রয়োজন বা নিজেদের অপারগতার কথা জানে না, এমনকি জানে না তাদের পরিধেয় অথবা আহার্য কী হওয়া উচিত। এটাই যথেষ্টরূপে প্রমাণ করে যে, মানুষকে ভ্রষ্ট করার জন্য অতিকায় লাল ড্রাগন প্রভূত প্রচেষ্টা প্রয়োগ করেছে। তার কদর্যতা চিনদেশের প্রতিটি অঞ্চল জুড়ে প্রসারিত হয়, এবং মানুষকে সে এতটাই বিচলিত করেছে যে তারা এই অবক্ষয়ী, অমার্জিত দেশে আর বসবাস করতে অনিচ্ছুক। ঈশ্বর সর্বাপেক্ষা ঘৃণা করেন অতিকায় লাল ড্রাগনের উপাদানকে, সেই কারণেই, তাঁর ক্রোধের দরুন, তিনি মানুষকে প্রতিদিন স্মরণ করান, এবং নিয়ত তারা তাঁর ক্রোধান্বিত দৃষ্টির নীচে জীবনধারণ করে। তারপরেও, অধিকাংশ মানুষ এখনো ঈশ্বরের অন্বেষণ করতে জানে না; পরিবর্তে, তারা শুধু সেখানে বসে থাকে, দেখে, সবকিছু তাদের হাতে ধরে করিয়ে দেওয়া হবে ভেবে অপেক্ষা করে। এমনকি তাদের যদি অনাহারে মারা যাওয়ার উপক্রমও হয়ে থাকে, তবু নিজেদের খাদ্য অন্বেষণে তারা আগ্রহী হবে না। মানুষের বিবেক অনেক দিন আগেই শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে, এবং সারসত্যের দিক দিয়ে তারা উদাসীন হৃদয়ের মানুষে পরিবর্তিত হয়েছে। তাই এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে ঈশ্বর বলেছিলেন, “আমি তোমাদের প্রোৎসাহিত না করলে, তোমরা এখনো জাগ্রত হতে না, এখনো তোমরা যেন হিমায়িত, যেন শীতঘুমে নিরত রয়ে যেতে।” মানুষ যেন শীতঘুম যাপনকারী প্রাণী, খাদ্য বা পানীয়ের কোনো প্রয়োজন ব্যতিরেকেই শীতকাল অতিবাহিত করে দেয়; ঈশ্বরের লোকজনের বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক এমনই। কেবলমাত্র এই কারণেই, ঈশ্বরের একমাত্র চাহিদা হল, মানুষ যেন আলোকের ভিতর স্বয়ং ঈশ্বরের অবতারকে জানতে পারে; তিনি দাবি করেন না যে মানুষকে আমূল পাল্টে যেতে হবে, এ-ও দাবি করেন না যে স্বীয় জীবনে তাদের ব্যাপক কোনো বিকাশ লাভ করতে হবে। ক্লিন্ন ও কলুষিত লাল ড্রাগনকে পর্যুদস্ত করতে, এবং তার মাধ্যমে ঈশ্বরের মহান ক্ষমতাকে আরো বেশি করে প্রতীয়মান করতে, এটুকুই যথেষ্ট হবে।

মানুষ যখন ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে, তারা শুধু বাক্যগুলির আক্ষরিক অর্থকেই উপলব্ধি করে, এবং তারা এগুলির আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুধাবন করতে অক্ষম। “বিক্ষুব্ধ ঊর্মিমালা”-র মতো সামান্য শব্দবন্ধটুকু প্রতিটি বীরপুরুষ ও বিজেতাকে হতবুদ্ধি করে দিয়েছে। ঈশ্বরের ক্রোধ যখন প্রদর্শিত হয়, তখন তাঁর বাক্য, কার্যকলাপ, ও প্রকৃতি কি বিক্ষুব্ধ ঊর্মিমালা নয়? ঈশ্বর যখন সকল মানুষকে বিচার করেন, সেটা কি তাঁর ক্রোধের এক উদ্ঘাটন নয়? এহেন সময়কালেই কি সেই বিক্ষুব্ধ ঊর্মিমালা কার্যকর হয়ে ওঠে না? তাদের ভ্রষ্ট আচরণের কারণে, এমন কোন মানুষ আছে যে এমন বিক্ষুব্ধ ঊর্মিমালার ভিতর বাস করছে না? বাক্যান্তরে, কে-ই বা ঈশ্বরের ক্রোধের মধ্যে বাস করে না? ঈশ্বর যখন মানবজাতির উপর বিপর্যয়ের দণ্ড বর্ষণ করতে মনস্থ করেন, তখনই কি মানুষ “তিমিরবরণ মেঘের পতনোন্মুখ উদ্দামতা” প্রত্যক্ষ করে না? কোন ব্যক্তি বিপর্যয় প্রত্যক্ষ করে পলায়নপর হয় না? ঈশ্বরের ক্রোধ তুমুল ধারাপাতের মতো বর্ষিত হয়, এবং প্রবল বাত্যাপ্রবাহের মতো মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। ঈশ্বরের বাক্যের মধ্য দিয়ে সকল মানুষ পরিশুদ্ধ হয়, যেন ঘূর্ণায়মান তুষারঝঞ্ঝার সম্মুখীন হয়েছে। মানবজাতির পক্ষে ঈশ্বরের বাক্যের থই পাওয়া সর্বাপেক্ষা দুষ্কর। তাঁর বাক্যের মাধ্যমে তিনি জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন, এবং তাঁর বাক্যের মাধ্যমে সমগ্র মানবজাতিকে তিনি পরিচালিত ও পরিশুদ্ধ করেন। এবং অন্তিমে, তাঁর বাক্যের মাধ্যমেই সমগ্র বিশ্বজগতকে তিনি বিশুদ্ধতার মধ্যে প্রত্যাবৃত্ত করবেন। তাঁর সকল বাক্যের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় যে, ঈশ্বরের আত্মার অস্তিত্ব শূন্যগর্ভ নয়, এবং একমাত্র তাঁর বাক্যের মধ্যেই মানুষ উদ্বর্তনের উপায়ের একটুখানি আভাস পায়। সকল মানুষ তাঁর বাক্যকে বহুমূল্য সম্পদ বলে জ্ঞান করে, কারণ তা জীবনযাপনের রসদ ধারণ করে। ঈশ্বরের বাক্যের উপর মানুষ যত বেশি মনোনিবেশ করে, ঈশ্বর তত বেশি তাদেরকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন—যে প্রশ্ন তাদের হতবুদ্ধি করে ফেলে ও উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগ দেয় না। ঈশ্বরের বাকি সমস্ত বাক্য যদি বিবেচনায় না-ও আনা হয়, শুধুমাত্র তাঁর প্রশ্নপরম্পরাই মানুষকে বেশ কিছুটা সময় ভাবিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট। ঈশ্বরের মধ্যে সবকিছুই প্রকৃত অর্থে পূর্ণ ও সুপ্রতুল, কোনোকিছুরই অভাব নেই। কিন্তু, মানুষ তার খুব একটা উপভোগ করতে পারে না; মানুষ তাঁর বাক্যের শুধু উপরিস্তরটুকুই জানে, তেমন এক লোকের মতো যে মুরগির ত্বকটি দেখলেও তার মাংস খেতে অক্ষম। এর অর্থ, মানুষের সৌভাগ্যে একটা ঘাটতি রয়েছে, যার ফলে তারা ঈশ্বরকে উপভোগ করতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের পূর্বধারণার ভিতর নিজস্ব ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি রয়েছে, সেই কারণেই অনিশ্চিত ঈশ্বর কী, বা শয়তানের প্রতিমূর্তি কেমন তা কেউ জানে না। তাই, ঈশ্বর যখন বলেছিলেন, “কারণ তুমি যাতে বিশ্বাস করো তা নিছক শয়তানের প্রতিমূর্তি, এবং এর সাথে স্বয়ং ঈশ্বরের কোনো সংযোগই নেই,” সকল মানুষ বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিল: এত বছর ধরে তারা বিশ্বাস করেছে, তবু তারা জানতো না যে, যাতে তারা আস্থাস্থাপন করেছিল তা ছিল শয়তান, স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন না। স্বীয় অন্তরে তারা হঠাৎ একটা শূন্যতা বোধ করেছিল, কিন্তু কী বলবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না। তারা আবার তখন বিহ্বল হতে শুরু করেছিল। কেবল এমনতরো প্রচেষ্টা চালিয়েই মানুষ নতুন আলোককে আরো ভালো ভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং, সেই সূত্রে, অতীতের বিষয়গুলিকে অস্বীকার করতে পারে। সেই বিষয়গুলি যত সন্তোষজনকই মনে হোক না কেন, সেগুলি কার্যকর নয়। স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে উপলব্ধি করা মানুষের পক্ষে অধিকতর হিতকর; তা তাদের পূর্বধারণাসমূহ তাদের হৃদয়ে যে মর্যাদার স্থান অধিকার করে, তা থেকে তাদের মুক্ত হতে সক্ষম করে, এবং শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরকে তাদের অধিকার করতে দেয়। একমাত্র এই উপায়েই অবতারের তাৎপর্য বুঝে ওঠা যায়, মানুষকে যা তাদের চর্মচক্ষের সাহায্যে স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম করে।

ঈশ্বর মানুষকে বহুবার আধ্যাত্মিক জগতের পরিস্থিতির বিষয়ে বলেছেন: “শয়তান যখন আমার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়, আমি তার উন্মত্ত হিংস্রতার হেতু সবেগে পশ্চাদগমন করি না, বা তার কদর্যতার কারণে ভীতও হই না: আমি কেবল তাকে উপেক্ষা করি।” এর থেকে মানুষ যে অর্থ নিষ্কাশন করেছে তা কেবল বাস্তবতার একটি পরিস্থিতি; আধ্যাত্মিক জগতের সত্য তাদের জানা নেই। ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছেন বলে, ঈশ্বরকে আক্রমণ করার আশায় শয়তান সকল প্রকার দোষারোপের প্রয়োগ ঘটিয়েছে। কিন্তু ঈশ্বর পশ্চাদ্গমন করেন না; তিনি কেবল বাক্য উচ্চারণ করেন এবং মানবজাতির মাঝে কার্য করে যান, তাঁর শরীরী অবতাররূপের মাধ্যমে মানুষকে তাঁকে জানার সুযোগ করে দেন। এসব দেখে শয়তান রাগে রক্তচক্ষু হয়ে ওঠে, এবং ঈশ্বরের লোকজন যাতে নেতিবাচক, পশ্চাদগামী এবং এমনকি পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে সেই উদ্দেশ্যে নানাবিধ প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু, ঈশ্বরের বাক্যের প্রভাবে শয়তান সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে, যা তাকে আরও রুষ্ট করে তোলে। সেই কারণেই, ঈশ্বর সকলকে স্মরণ করান, “তোমাদের জীবনে, এমন একটা সময় আসতে পারে, যখন তুমি এমনতরো এক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে: তখন কি তুমি স্বেচ্ছায় নিজেকে শয়তানের হাতে বন্দী হতে দেবে, নাকি আমাকে তোমায় অর্জন করার সুযোগ দেবে?” মানুষ যদিও আধ্যাত্মিক জগতের ঘটনাসমূহের বিষয়ে অবহিত নয়, তবু ঈশ্বরের মুখ থেকে এধরনের বাক্য শ্রবণমাত্র তারা সতর্ক ও শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এর ফলে শয়তানের আক্রমণ প্রতিহত হয়, যা পর্যাপ্তভাবে ঈশ্বরের মহিমা প্রদর্শন করে। বহুপূর্বেই কার্যের এক নতুন পদ্ধতিতে প্রবেশ করা সত্ত্বেও, রাজ্যের জীবন বিষয়ে মানুষের ধারণা এখনও অপরিষ্কার, এবং তারা যদি তা উপলব্ধি করেও থাকে, তবু তাদের উপলব্ধিতে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। সেই কারণেই, একটি সতর্কবার্তার মাধ্যমে ঈশ্বর মানুষকে রাজ্যের জীবনের সারসত্যের সাথে পরিচিত করিয়েছেন: “রাজ্যের জীবন হল মানুষের ও স্বয়ং ঈশ্বরের জীবন।” স্বয়ং ঈশ্বর যেহেতু দেহরূপে অবতারত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন, পৃথিবীর বুকে তাই তৃতীয় স্বর্গের জীবন বাস্তবায়িত হয়েছে। এ নিছক ঈশ্বরের পরিকল্পনামাত্রই নয়—তিনি তা সংঘটিত করিয়েছেন। যত সময় যায়, মানুষ তত ভালো করে স্বয়ং ঈশ্বরকে জানতে পারে, এবং এইভাবে, তারা স্বর্গের জীবনকে আরো বেশি করে আস্বাদন করতে পারে, কারণ তারা অকৃত্রিমভাবে অনুভব করে যে, ঈশ্বর পৃথিবীর বুকেই আছেন, তিনি শুধুমাত্র আর স্বর্গস্থ অনিশ্চিত ঈশ্বর নন। সেহেতু, পৃথিবীর জীবন স্বর্গের জীবনের অনুরূপ। বাস্তবটা হল, ঈশ্বরের অবতার মনুষ্যজগতের তিক্ততা আস্বাদন করেন, এবং যত বেশি তিনি তা করতে পারেন, তত বেশি করে প্রমাণিত হয় যে তিনি স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বর। সেই কারণেই এই উক্তি, “আমার বাসস্থানে, যে স্থানে আমি প্রচ্ছন্ন রয়েছি—তা সত্ত্বেও, যা আমার বাসস্থান, সেখানে, আমি আমার সকল শত্রুকে পরাভূত করেছি; আমার বাসস্থানে, আমি পৃথিবীর বুকে বসবাস করার বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করেছি; আমার বাসস্থান থেকে, মানুষের প্রতিটি বাক্য ও ক্রিয়াকলাপ আমি লক্ষ্য করছি, এবং সমগ্র মানবজাতিকে আমি সুরক্ষিত রাখছি ও পরিচালিত করছি।” হল সেই সত্যের পর্যাপ্ত প্রমাণ যে, আজকের ঈশ্বর বাস্তববাদী। দেহরূপে প্রকৃতই জীবনযাপন করা, দেহরূপে প্রকৃতই মানবজীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করা, দেহরূপে প্রকৃতই সমগ্র মানবতাকে উপলব্ধি করা, দেহরূপে প্রকৃতই মানবজাতিকে জয় করা, দেহরূপে প্রকৃতই অতিকায় লাল ড্রাগনের বিরুদ্ধে এক নির্ণায়ক সংগ্রাম ঘোষণা করা, এবং দেহরূপেই ঈশ্বরের সকল কার্য সম্পাদন করা—এ-ই কি স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের যথাযথ অস্তিত্ব নয়? তবু, খুব কদাচিৎ-ই এমন মানুষ মেলে যে ঈশ্বর-কথিত এই সাধারণ পংক্তিগুলির মধ্যে বার্তাটি দেখতে পায়; অধিকাংশ মানুষ কেবল এগুলির উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে যায়, এবং ঈশ্বরের বাক্যের মহার্ঘতা বা দুষ্প্রাপ্যতা অনুভব করে না।

ঈশ্বরের বাক্যগুলি বিশেষত অতি উত্তমরূপে অবস্থান্তরিত হয়। “মানবজাতি যেহেতু অচেতন হয়ে আছে,” বাক্যাংশটি স্বয়ং ঈশ্বরের একটি বর্ণনা গ্রহণ করে, এবং তাকে সমগ্র মানবজাতির অবস্থার বর্ণনায় রূপান্তরিত করে। এখানে, “শীতল দীপ্তির তরঙ্গাঘাত” পূর্বের বজ্রালোককে বোঝায় না; বরং, তা ঈশ্বরের বাক্যকে নির্দেশ করে, তাঁর কার্য সম্পাদনের নতুন পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। তাই, এর মধ্যে সমস্ত রকমের মানবিক ঘাত-প্রতিঘাত দৃষ্টিগোচর হয়: নতুন পদ্ধতিতে প্রবেশ করার পর, সকল মানুষ দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে, এবং বুঝতে পারে না কোথা থেকে তারা এসেছে, এবং কোথায়ই বা তারা যাচ্ছে। “অধিকাংশ মানুষ লেজার রশ্মিসন্নিভ এই আলোকচ্ছটায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়”—এই বাক্যাংশটি নতুন প্রণালী থেকে বহিষ্কৃত মানুষদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছে; তারা হল সেইসব মানুষ যারা পরীক্ষাগুলির চাপ বা যন্ত্রণাভোগের পরিমার্জন সহ্য করতে পারে না, আর তাই পুনরায় অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হয়। ঈশ্বরের বাক্য মানবজাতিকে এতটাই অনাবৃত করে যে, মনে হয় মানুষ ঈশ্বরের বাক্যকে দেখলেই যেন শঙ্কিত হয়ে ওঠে, এবং তারা কোনো কথা বলার স্পর্ধা দেখায় না, যেন তারা তাদের হৃৎপিণ্ডের দিকে তাক করে থাকা একটা মেশিনগান দেখেছে। আবার তারা এটাও অনুভব করে যে ঈশ্বরের বাক্যের মধ্যে উপযোগী বস্তুসমূহ রয়েছে। তাদের মনের মধ্যে এক তুমুল দ্বন্দ্ব চলে, এবং তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের বিশ্বাসের দরুন তারা কোনোক্রমে তাদের মনকে দৃঢ় করে তোলে, এবং ঈশ্বর তাদের পরিত্যাগ করতে পারেন এমন আশঙ্কায় তারা তাঁর বাক্যের গভীরে অনুসন্ধান চালাতে থাকে। ঠিক যেমন ঈশ্বর বলেছেন, “মানবজাতির মধ্যে কে এমনতরো অবস্থায় বিদ্যমান নয়? কে আমার আলোকের মধ্যে অবস্থান করে না? এমনকি যদি তুমি বলবানও হও, কিম্বা যদি তুমি নিতান্তই দুর্বলও হও, কেমন করে আমার আলোকের অভ্যুদয়কে তুমি এড়িয়ে যেতে পারবে?” ঈশ্বর যদি কাউকে ব্যবহার করেন, তাহলে, এমনকি তারা দুর্বল হলেও, ঈশ্বর তবু তাঁর শাস্তির মাধ্যমে তাদের প্রদীপ্ত ও আলোকিত করবেন; তাই, মানুষ ঈশ্বরের বাক্য যত বেশি করে পাঠ করে, তত বেশি করে তাঁকে উপলব্ধি করে, তত বেশি তাঁকে সম্মান করে, এবং বেপরোয়া হওয়ার স্পর্ধা তত কম দেখায়। মানুষ যে তাদের আজকের অবস্থানে এসে উপনীত হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের মহান ক্ষমতার কারণেই। মানুষ যে ঈশ্বরকে ভয় করে, তা তাঁর বাক্যের কর্তৃত্বের কারণেই—অর্থাৎ, তা তাঁর বাক্যে বিদ্যমান আত্মার এক ফলশ্রুতি। মানবজাতির প্রকৃত রূপকে ঈশ্বর যত অনাবৃত করেন, তাঁর প্রতি তাদের সম্ভ্রমবোধ তত বর্ধিত হয়, এবং এইভাবে, তারা তাঁর অস্তিত্বের বাস্তবতার বিষয়ে আরো নিশ্চিত হয়ে ওঠে। মানবজাতির ঈশ্বরোপলব্ধির পথে তাঁর বাক্য এক আলোকসঙ্কেত, তাঁর প্রদত্ত এক পথরেখা। সতর্কভাবে এবিষয়ে চিন্তা করে দেখো: বিষয়টি এমনই নয় কি?

উপরে যা বলা হয়েছে তা কি মানবজাতির সম্মুখবর্তী আলোকসঙ্কেত নয় যা তাদের পথকে আলোকিত করে?

পূর্ববর্তী:  অধ্যায় ১২

পরবর্তী:  অধ্যায় ১৪

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Connect with us on Messenger