তোমার জানা উচিত যে বাস্তববাদী ঈশ্বরই স্বয়ং ঈশ্বর

বাস্তববাদী ঈশ্বর সম্বন্ধে তোমার কি জানা উচিত? আত্মা, ছবি এবং বাক্য মিলে গঠিত হন স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বর, এবং এই হল স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের প্রকৃত অর্থ। তুমি যদি কেবল ছবিটিকে চেনো—যদি তুমি তাঁর অভ্যাস এবং ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে অবগত হও—কিন্তু আত্মার কর্ম সম্বন্ধে অথবা আত্মা দেহধারণ করে যে কর্ম সম্পাদন করেন সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হও, এবং যদি তুমি কেবল আত্মা ও বাক্যের প্রতি মনোযোগী হও, এবং কেবলমাত্র আত্মার সমীপে প্রার্থনা করে যাও, কিন্তু বাস্তববাদী ঈশ্বরের মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা যে কর্ম সম্পাদন করে চলেছেন সে বিষয়ে অবগত না হও, তাহলে এর থেকে আরেকবার প্রমাণিত হয় যে তুমি এখনও বাস্তববাদী ঈশ্বরকে চিনে উঠতে পার নি। বাস্তববাদী ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞানের অন্তর্গত হল তাঁর বাক্যসমূহকে জানা ও অনুভব করা, পবিত্র আত্মার কার্যের নিয়মাবলী ও নীতিসমূহ উপলব্ধি করা, এবং ঈশ্বরের আত্মা কীভাবে দেহধারণপূর্বক স্বীয় কার্য সম্পাদন করেন তা অনুধাবন করা। এর মধ্যে এই সংজ্ঞাও অন্তর্গত যে, দেহধারণপূর্বক ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত প্রতিটি ক্রিয়াকলাপের পরিচালনা করছেন আত্মা, এবং তাঁর কথিত বাক্য আদতে আত্মার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তি। সুতরাং, বাস্তববাদী ঈশ্বরকে জানার জন্য, মনুষ্যত্ব এবং দেবত্বের মধ্যে ঈশ্বর কীভাবে কর্ম সম্পাদন করেন সে বিষয়ে জানার গুরুত্ব অপরিসীম; এটিই, পালাক্রমে, আত্মার অভিব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত, যার সাথে সমস্ত মানুষ বিজড়িত হয়।

আত্মার অভিব্যক্তির বিভিন্ন দিকগুলি কী? কখনও ঈশ্বর কার্য করেন মনুষ্যত্বের মাঝে, কখনও করেন দেবত্বে—কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই পূর্ণ কর্তৃত্ব আত্মার। মানুষের মধ্যে আত্মার যেমন প্রকৃতি, তেমনই তাদের বাহ্যিক অভিব্যক্তি। আত্মা স্বাভাবিক ধারাতেই কর্ম করেন, কিন্তু আত্মার মাধ্যমে তাঁর নির্দেশনার দুইটি অংশ রয়েছে: একটি অংশ হল মনুষ্যত্বের মাঝে তাঁর কর্ম, অপর অংশটি হল দেবত্বের মাধ্যমে তাঁর কর্ম। তোমার এই বিষয়টি স্পষ্টভাবে জেনে রাখা প্রয়োজন। পরিস্থিতি অনুসারে আত্মার কর্মের পরিবর্তন ঘটে: যখন তাঁর মানবীয় কর্মের প্রয়োজন ঘটে, তখন আত্মা সেই মানবীয় কর্মের নির্দেশ দেন, এবং যখন তাঁর দৈব কর্মের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন সেই কর্ম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে দেবত্বের প্রত্যক্ষ আবির্ভাব ঘটে। যেহেতু ঈশ্বর দেহীরূপে কার্য করেন এবং দেহধারণপূর্বক আবির্ভূত হন, সেহেতু তিনি মনুষ্যত্ব এবং দেবত্ব উভয়ের মধ্যেই তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন। মনুষ্যত্বের মাঝে তাঁর কর্মের নির্দেশনা করেন আত্মা এবং সেই কর্ম সম্পাদনের উদ্দেশ্য হল মানুষের দৈহিক প্রয়োজনীয়তা চরিতার্থ করা, তাঁর সাথে তাদের সংযোগ সহজতর করা, তাদের ঈশ্বরের বাস্তবিকতা এবং স্বাভাবিকত্ব প্রত্যক্ষ করতে অনুমোদিত করা, এবং তাদের চাক্ষুষ করার সুযোগ দেওয়া যে, ঈশ্বরের আত্মা দেহধারণ করেছেন এবং মানুষের মধ্যেই রয়েছেন, মানুষের সাথেই বসবাস করছেন, এবং মানুষের সাথে মেলামেশা করছেন। দেবত্বের মধ্যে তাঁর কর্ম সম্পাদনের উদ্দেশ্য হল মানুষকে জীবনের রসদ যোগানো এবং সকল বিষয়ে এক ইতিবাচক দিক থেকে মানুষকে পথপ্রদর্শন করা, এমন ভাবে মনুষ্যস্বভাবের পরিবর্তনসাধন করা যাতে তারা যথার্থভাবে আত্মার দেহধারণপূর্বক আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হয়। মূলতঃ, দেবত্বের মধ্যে ঈশ্বরের কর্ম ও বাক্যের মাধ্যমেই মানবজীবনের বিকাশ প্রত্যক্ষভাবে অর্জিত হয়। মানুষ যদি দেবত্বের মধ্যে ঈশ্বরের কর্মকে গ্রহণ করে একমাত্র তাহলেই তারা স্বীয় স্বভাবের পরিবর্তনসাধনে সক্ষম হয়, এবং কেবলমাত্র তখনই তাদের আত্মা পরিতৃপ্ত হতে পারে; এর সাথে যদি মানবতায় ঈশ্বরের কর্ম—অর্থাৎ, ঈশ্বরের দ্বারা মানবতার পরিচালন, মদত ও সরবরাহ—সংযুক্ত হয়, কেবলমাত্র তাহলেই ঈশ্বরের কর্মের ফল পূর্ণত অর্জন করা সম্ভবপর হয়। যে স্বয়ং বাস্তবিক ঈশ্বরের কথা ইদানীং বলা হয়, তিনি মনুষ্যত্ব এবং দেবত্ব উভয় পরিসরেই তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন। বাস্তবিক ঈশ্বরের আবির্ভাবের মাধ্যমে, তাঁর স্বাভাবিক মানবীয় কর্ম ও জীবন এবং তাঁর সম্পূর্ণ ঐশ্বরিক কর্ম উভয়ই অর্জিত হয়। তাঁর মনুষ্যত্ব ও দেবত্ব একীভূত হয় এবং উভয়ের কর্মই বাক্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়; মনুষ্যত্বে হোক অথবা দেবত্বে, তিনি বাক্য উচ্চারণ করেন। ঈশ্বর যখন মনুষ্যত্বের মধ্যে কাজ করেন, তিনি মনুষ্যত্বের ভাষাতেই কথা বলেন, যাতে মানুষেরা অংশগ্রহণ এবং উপলব্ধি করতে পারে। যাতে তাঁর বাক্যসমূহ সকল মানুষকে সরবরাহ করা যায় সেগুলি তাই সরলভাবে কথিত এবং সহজেই বোধগম্য হয়; জ্ঞানী অথবা স্বল্পশিক্ষিত যেমন মানুষই হোক না কেন, সকলেই ঈশ্বরের বাক্যকে গ্রহণ করতে পারে। দেবত্বের মধ্যে ঈশ্বরের সম্পাদিত কর্মও বাক্যের মাধ্যমেই নিষ্পন্ন হয়, কিন্তু তা সংস্থান-বন্দোবস্তে ঠাসা, জীবনে পরিপূর্ণ, মানবীয় ধারণাসমূহের দ্বারা তা অকলুষিত, এর সঙ্গে মানবিক পছন্দ-অপছন্দের কোনো সম্বন্ধ নেই, এবং তা মানবীয় সীমাবদ্ধতার ঊর্দ্ধে, তা যে কোনও প্রকারের স্বাভাবিক মানবতার সীমানার অতীত; দেহে সম্পাদিত হলেও, তা আত্মার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তি। মানুষ যদি কেবল মনুষ্যত্বের মধ্যে সম্পাদিত ঈশ্বরের কর্মটুকুই গ্রহণ করে, তাহলে তারা নির্দিষ্ট একটা গণ্ডীর মধ্যেই নিজেদের আবদ্ধ করে রাখবে, এবং সেক্ষেত্রে তাদের সামান্যতম পরিবর্তন সাধন করতে হলেও নিয়মিত মোকাবিলা, অপ্রয়োজনীয় অংশের কর্তন এবং অনুশাসনের প্রয়োজন রয়ে যাবে। পবিত্র আত্মার কর্ম অথবা উপস্থিতি ব্যতিরেকে অবশ্য তারা সর্বদাই তাদের পুরানো পন্থা অবলম্বন করবে; কেবলমাত্র দেবত্বের মাধ্যমে সংঘটিত কর্মের মাধ্যমেই এই ব্যাধি এবং ত্রুটি সংশোধিত হতে পারে, এবং একমাত্র তখনই মানুষকে সম্পূর্ণ করা যেতে পারে। দীর্ঘকালীন বোঝাপড়া অথবা কর্তনের পরিবর্তে যা প্রয়োজন তা হল ইতিবাচক ব্যবস্থাদান, সমস্ত ঘাটতি পূরণ করার উদ্দেশ্যে, মানুষের সকল পরিস্থিতির উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে, এবং তাদের জীবনকে, তাদের প্রতিটি উচ্চারণকে, তাদের প্রত্যেক ক্রিয়াকলাপকে পরিচালিত করার জন্য, এবং তাদের অভিপ্রায় ও প্রেরণাসমূহকে উন্মোচিত করার উদ্দেশ্যে বাক্যের ব্যবহার করা। এ-ই হল বাস্তববাদী ঈশ্বরের প্রকৃত কার্য। সুতরাং, বাস্তববাদী ঈশ্বরের প্রতি তোমার মনোভাবে, তাঁকে স্বীকৃতি এবং মান্যতাদান করে তৎক্ষণাৎ তাঁর মানবতার সামনে তোমার আত্মসমর্পণ করা উচিৎ, এবং অধিকন্তু তোমার উচিত তাঁর ঐশ্বরিক কর্ম এবং বাক্যসমূহকেও গ্রহণ এবং মান্য করা। ঈশ্বরের দেহধারণপূর্বক আবির্ভূত হওয়ার অর্থ হল এই যে, তাঁর স্বাভাবিক মানবতা এবং তাঁর দেহধারী অবতাররূপের মাধ্যমেই ঈশ্বরের আত্মার সকল কর্ম ও সকল বাক্য, যথাক্রমে সম্পাদিত এবং কথিত হয়ে চলেছে। বাক্যান্তরে, ঈশ্বরের আত্মা দেহধারণপূর্বক একাধারে তাঁর মানবীয় কর্ম পরিচালন এবং ঐশ্বরিক কর্ম সম্পাদন করেন, এবং অবতাররূপী ঈশ্বরের মধ্যে মানবতার মাঝে ঈশ্বরের সম্পাদিত কর্ম এবং তাঁর বিশুদ্ধ ঐশ্বরিক কর্মকাণ্ড—উভয়ই পরিলক্ষিত হয়। এ-ই হল বাস্তববাদী ঈশ্বরের দেহরূপে আবির্ভূত হওয়ার প্রকৃত তাৎপর্য। তুমি যদি তা স্পষ্টভাবে দেখতে পাও, তাহলে তুমি ঈশ্বরের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হবে; তখন তুমি তাঁর দেবত্বে সম্পাদিত কর্মকে অধিকতর গুরুত্বদান, অথবা তাঁর মনুষ্যত্বে সম্পাদিত কর্মকে অযথা তাচ্ছিল্য করা—উভয় থেকেই বিরত থাকবে, তখন তুমি কোনো চরম অবস্থান গ্রহণ করবে না এবং ঘুরপথেও যাবে না। সামগ্রিকভাবে, বাস্তববাদী ঈশ্বরের অর্থ হল, পবিত্র আত্মার পরিচালনা মোতাবেক মনুষ্যত্ব এবং দেবত্বের মধ্যে তাঁর সম্পাদিত কর্ম তাঁর দেহরূপের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যার ফলে মানুষ দেখতে সক্ষম হয় যে তিনি সুস্পষ্ট ও জীবন্ত, বাস্তব এবং প্রকৃত।

ঈশ্বরের আত্মা মনুষ্যত্বের মাঝে যে কর্ম সম্পাদন করেন তার কিছু ক্রান্তিকালীন পর্যায় রয়েছে। মানবতাকে নিখুঁত করে তোলার মাধ্যমে, তিনি তাঁর মানবতাকে আত্মার পরিচালনা গ্রহণে সমর্থ করেন, অতঃপর তাঁর মানবতা গির্জাগুলিকে সরবরাহ ও নেতৃত্বদানে সক্ষম হয়। এ হল ঈশ্বরের স্বাভাবিক কর্মের এক অভিব্যক্তি। অতএব, তুমি যদি স্পষ্টভাবে ঈশ্বরের মানবীয় কর্মের নীতিসমূহ দেখতে পাও, তাহলে ঈশ্বরের মনুষ্যত্বের মধ্যে সম্পাদিত কর্ম-বিষয়ে তোমার কোনও অপধারণা পোষণ করার সম্ভাবনা কম। আর যাই হোক না কেন, ঈশ্বরের আত্মা কখনোই ভ্রান্ত হতে পারেন না। তিনি নির্ভূল এবং সকল ভ্রান্তি রহিত; তিনি ভ্রান্তভাবে কিছু করেন না। ঐশ্বরিক কর্ম হল ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রত্যক্ষ অভিব্যক্তি, যা মানবতার হস্তক্ষেপ বিরহিত। যেহেতু এই ঐশ্বরিক কর্মের প্রত্যক্ষ উৎস আত্মা, সেহেতু একে আর আলাদা ভাবে নিখুঁত করে তুলতে হয় না। কিন্তু তিনি যে দেবত্বের মধ্যে কাজ করতে পারেন তা তাঁর স্বাভাবিক মানবতার কারণেই; এর মধ্যে অতিপ্রাকৃত কিছু নেই, এবং এমন মনে হয় যেন এই কার্য কোনও স্বাভাবিক ব্যক্তির দ্বারাই সম্পাদিত হয়েছে। ঈশ্বর মূলতঃ দেহরূপের মাধ্যমে ঈশ্বরের বাক্যকে প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ও দেহীভাবে ঈশ্বরের আত্মার কর্ম সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যেই স্বর্গ থেকে মর্ত্যে আবির্ভূত হয়েছেন।

বর্তমানে, বাস্তববাদী ঈশ্বর সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান খুবই একপেশে, এবং ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের তাৎপর্য সম্বন্ধে তাদের উপলব্ধি এখনও অতীব নগণ্য। দেহধারণপূর্বক আবির্ভূত ঈশ্বরের মাধ্যমে মানুষ তাঁর কর্ম ও বাক্য প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং দেখতে পায় ঈশ্বরের আত্মা কত প্রভূতভাবে পরিপূর্ণ, তিনি কত সমৃদ্ধ। তবু, যাই হোক না কেন, ঈশ্বরের সাক্ষ্য পরিণামে ঈশ্বরের আত্মার থেকেই আগত হয়: ঈশ্বরের দেহধারণপূর্বক সম্পাদিত কর্ম, তাঁর কর্ম সম্পাদনের নীতিসমূহ, তাঁর মনুষ্যত্বের মধ্যে এবং দেবত্বের মধ্যে সম্পাদিত কর্মসকল—এই সকলকিছু। মানুষকে এই জ্ঞান অর্জন করতেই হবে। বর্তমানে, তুমি এই দেহধারী ঈশ্বরের অর্চনা করতে সক্ষম হয়েছ, যদিও সারসত্য হল যে তুমি আদতে আত্মার উপাসনাই করছ, এবং অবতাররূপী ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞানার্জনের পথে ন্যূনতম এই বিষয়গুলি মানুষকে অর্জন করতেই হবে: দেহরূপের মাধ্যমে আত্মার সারসত্যকে জানা, দেহরূপে আত্মার ঐশ্বরিক এবং মানবীয় কার্য সম্বন্ধে অবহিত হওয়া, অবতাররূপে আত্মার দ্বারা উচ্চারিত সকল বাক্য এবং কথনকে গ্রহণ করা, এবং কীভাবে ঈশ্বরের আত্মা দেহকে পরিচালিত করেন এবং দেহের মাধ্যমে স্বীয় ক্ষমতা পরিদর্শিত করেন—তা উপলব্ধি করা। অর্থাৎ, প্রকারান্তরে বললে, দেহরূপের মধ্য দিয়ে মানুষ স্বর্গের আত্মার বিষয়ে অবহিত হয়; মানুষের মাঝে স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের আবির্ভাবের ফলে মানুষের ধারণা থেকে অস্পষ্ট ঈশ্বর অপসারিত হয়েছে। স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের উপাসনার ফলে তারা ঈশ্বরের প্রতি অধিকতর অনুগত হয়ে ওঠে, এবং, ঈশ্বরের আত্মার দেহধারণপূর্বক সম্পাদিত ঐশ্বরিক কর্ম ও মানবীয় কর্মের মাধ্যমে, মানুষ উদ্ঘাটন লাভ করে এবং পরিচালিত হয়, এবং মানুষের জীবনচরিত্রের পরিবর্তন সাধিত হয়। এই-ই হল আত্মার দেহধারণপূর্বক আবির্ভাবের প্রকৃত অর্থ, যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল যাতে মানুষ ঈশ্বরের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে, ঈশ্বরের উপর আস্থা রাখতে পারে, এবং ঈশ্বর-বিষয়ক জ্ঞান লাভ করতে পারে।

বাস্তববাদী ঈশ্বরের প্রতি মানুষের, মূলতঃ, কোন ধরনের মানসিকতা পোষণ করা উচিত? ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের বিষয়ে, বাক্যের দেহে আবির্ভূত হওয়ার বিষয়ে, ঈশ্বরের দেহে আবির্ভূত হওয়ার বিষয়ে, বাস্তববাদী ঈশ্বরের কার্যকলাপের বিষয়ে তুমি কী জানো? আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তুগুলি কী কী? ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণ, বাক্যের দেহে আবির্ভূত হওয়া, এবং ঈশ্বরের দেহীভাবে অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়সমূহকে উপলব্ধি করতেই হবে। তোমাদের উচিত ধীরে ধীরে এই বিষয়গুলিকে বুঝে নেওয়া, এবং, তোমাদের আত্মিক উচ্চতা ও কোন যুগে তুমি জীবনধারণ করছ তার উপর ভিত্তি করে তোমাদের জীবন-অভিজ্ঞতায় এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে একটা সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী হওয়া। মানুষ যে পদ্ধতিতে ঈশ্বরের বাক্য উপলব্ধি করে এবং যে উপায় অবলম্বন করে তারা ঈশ্বরের বাক্যের দেহে আবির্ভূত হওয়া সম্বন্ধে অবহিত হয় তা এক ও অভিন্ন। মানুষ যত বেশি ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা লাভ করে, তত বেশি তারা ঈশ্বরের আত্মা সম্বন্ধে অবহিত হয়; ঈশ্বরের বাক্য অনুধাবন করার মাধ্যমে, মানুষ আত্মার কর্ম সম্পাদনের নীতিসমূহ উপলব্ধি করে এবং স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে জানতে সক্ষম হয়। বস্তুত, ঈশ্বর যখন মানুষকে নিখুঁত এবং অর্জন করেন, তখন, আদতে, তিনি তাদের বাস্তববাদী ঈশ্বরের কর্ম সম্বন্ধে অবহিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন; তিনি বাস্তববাদী ঈশ্বরের কার্যকে ব্যবহার করছেন মানুষকে তাঁর অবতাররূপ ধারণের প্রকৃত তাৎপর্য প্রদর্শন করতে, তাদের দেখাতে যে ঈশ্বরের আত্মা বাস্তবিকভাবেই মানুষের সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছেন। মানুষ যখন ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত এবং নিখুঁত হয়ে ওঠে, তখন তারা বাস্তববাদী ঈশ্বরের অভিব্যক্তিসমূহ দ্বারা বিজিত হয়; বাস্তববাদী ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে তাদের পরিবর্তনসাধন হয় এবং তাদের অন্তরে ঈশ্বরের স্বীয় প্রাণশক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং তিনি যা (তা, তিনি তাঁর মানুষ্যত্বে যা অথবা তাঁর দেবত্বে যা, এই দুই স্বরূপের যেকোনোটিই হতে পারে), এবং যা তাঁর বাক্যের সারমর্ম—তার দ্বারা তারা পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং মানুষ তাঁর বাক্য অনুসারে জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। ঈশ্বর যখন মানুষকে অর্জন করেন তখন তিনি তা করেন মূলতঃ বাস্তববাদী ঈশ্বরের বাক্য ও উচ্চারণসমূহ ব্যবহার করার মাধ্যমে, যাতে মানুষের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলির সাথে মোকাবিলা করা যায়, তাদের বিচার এবং তাদের বিদ্রোহী স্বভাব উন্মোচিত করা যায়, এবং এই ভাবে তাদের যা প্রয়োজন তা তারা অর্জন করে নেয় এবং তারা দেখতে পায় যে ঈশ্বর মানুষের মাঝে আবির্ভূত হয়েছেন। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাস্তববাদী ঈশ্বরের দ্বারা সম্পাদিত কার্য আসলে প্রতিটি মানুষকে শয়তানের প্রভাব থেকে উদ্ধার করার কার্য, তাদের সেই কলুষিত স্থান থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কার্য, এবং তাদের ভ্রষ্ট স্বভাবকে বিদূরিত করার কার্য। বাস্তববাদী ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হওয়ার গভীরতম তাৎপর্য হল, সেই বাস্তববাদী ঈশ্বরকেই দৃষ্টান্তমূলক তথা আদর্শ হিসাবে গণ্য করে স্বাভাবিক মানবতাময় জীবন যাপন করতে সক্ষম হওয়া, সামান্যতম বিচ্যুতি অথবা অপগমন ছাড়াই বাস্তববাদী ঈশ্বরের বাক্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী অনুশীলন করতে সক্ষম হওয়া, তিনি যে উপায়ে বলেন সেই উপায়েই অনুশীলন করে যাওয়া, এবং তিনি যা-কিছু বলেন তা অর্জন করতে সমর্থ হওয়া। এইভাবেই, ঈশ্বর তোমাকে অর্জন করবেন। যখন তুমি ঈশ্বর দ্বারা অর্জিত হও, তখন তুমি যে কেবল পবিত্র আত্মার কর্মের অধিকার প্রাপ্ত হও, তা-ই নয়; মুলত, তুমি বাস্তববাদী ঈশ্বরের প্রয়োজন অনুসারে জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়ে ওঠো। কেবলমাত্র পবিত্র আত্মার কর্মে অধিকার থাকলেই যে তুমি যথার্থভাবে জীবনের অধিকারী হয়ে উঠবে, এমন নয়। আদতে, দেখতে হবে যে বাস্তববাদী ঈশ্বরের তোমার থেকে যা চাহিদা, সেই অনুযায়ী আচরণ করতে তুমি সক্ষম কি না, এরই সঙ্গে জড়িত রয়েছে তুমি ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হতে সমর্থ হবে কি না, সেই প্রশ্ন। এইগুলিই হল বাস্তববাদী ঈশ্বরের দেহধারণপূর্বক সম্পাদিত কর্মের মহত্তম তাৎপর্য। প্রকারান্তরে বললে, ঈশ্বর একদল মানুষকে অর্জন করেন প্রকৃত এবং বাস্তবিকভাবে দেহধারণের মাধ্যমে, সুস্পষ্ট ও জীবন্ত হয়ে ওঠার মাধ্যমে, মানুষের দ্বারা দৃষ্ট হওয়ার মাধ্যমে, দেহীভাবে যথার্থই আত্মার কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে, এবং, দেহধারণপূর্বক মানুষের সামনে দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে ওঠার মাধ্যমে। ঈশ্বরের দেহধারণপূর্বক আবির্ভাব মূলতঃ মানুষকে ঈশ্বরের বাস্তবিক কার্যসমূহ দেখতে সক্ষম করার উদ্দেশ্যে, নিরাকার আত্মাকে দেহরূপ দান করার উদ্দেশ্যে, এবং মানুষ যাতে তাঁকে দর্শন ও স্পর্শ করতে পায় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই সংঘটিত হয়েছে। এইভাবে, ঈশ্বর যাদের সম্পূর্ণ করেছেন তারা তাঁকে অনুসরণ করে জীবনযাপন করবে, তাঁর দ্বারা অর্জিত হবে, তাঁর ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। ঈশ্বর যদি মর্ত্যলোকে অবতীর্ণ না হয়ে কেবলমাত্র স্বর্গেই তাঁর বাক্য উচ্চারণ করতেন, তাহলে মানুষের পক্ষে ঈশ্বরকে জানা আজও সম্ভবপর হত না; তারা কেবল অন্তঃসারশূন্য তাত্ত্বিকতার মাধ্যমেই ঈশ্বরের কর্মসমূহের বিষয়ে প্রচার করতে সমর্থ হত এবং ঈশ্বরের বাক্যকে বাস্তবিকতা হিসাবে লাভ করতে সক্ষম হত না। ঈশ্বর যাদের অর্জন করতে চলেছেন তাদের সম্মুখে একটি দৃষ্টান্ত তথা আদর্শের ভূমিকা পালন করার উদ্দেশ্যেই মূলতঃ তিনি মর্ত্যলোকে আগত হয়েছেন; কেবলমাত্র এইভাবেই মানুষ ঈশ্বরকে প্রকৃতই জানতে, স্পর্শ করতে ও দর্শন করতে সক্ষম হয়, এবং কেবলমাত্র তখনই তারা ঈশ্বরের দ্বারা যথার্থভাবে অর্জিত হতে পারে।

পূর্ববর্তী:  সহস্রবর্ষীয় রাজত্বের যুগ উপস্থিত

পরবর্তী:  ঈশ্বরের বর্তমানের কার্যকে জানা

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Connect with us on Messenger