পথ … (৮)

মানবজাতির সাথে মেলামেশা এবং তাদের সাথে বসবাসের জন্য ঈশ্বরের এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া দু’একদিন আগের ঘটনা নয়। সেই সময়কালে, হয়ত, মানুষ ঈশ্বরের বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেছে, হয়ত ঈশ্বরকে সেবা করার বিষয়ে একাধিক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেছে, এবং নিজেদের ঈশ্বর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আরো পরিপক্ব হয়েছে। যেমনটাই হোক না কেন, লোকজন কমবেশি ঈশ্বরের স্বভাব উপলব্ধি করতে পারে, আর তারা নিজেদের স্বভাবও অগণিত উপায়ে প্রকাশ করে। আমি যেভাবে বিষয়টি দেখি, নমুনা হিসাবে ব্যবহার করার পক্ষে মানুষের বিভিন্ন প্রকাশই ঈশ্বরের পক্ষে যথেষ্ট, এবং তাদের মানসিক ক্রিয়াকলাপগুলিও জ্ঞাতব্য বিষয় হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তাঁর পক্ষে যথেষ্ট। হতে পারে যে এ হল ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে সহযোগিতার একটা দিক, যে বিষয়ে মানুষ অচেতন, যা ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত এই সম্পাদনকে অত্যন্ত স্পষ্ট এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। আমি এই নাটকের সাধারণ নির্দেশক হিসাবে আমার ভাই ও বোনেদের এই কথাগুলো বলছি—আমরা প্রত্যেকেই এই অভিনয় সম্পাদনের পরে আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির বিষয়ে, এবং এই অভিনয়ের মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকে কীভাবে জীবনের অভিজ্ঞতা পেয়েছি, তা নিয়ে কথা বলতে পারি। হৃদয় উন্মুক্ত করার জন্য, এবং নিজ নিজ সম্পাদিত শিল্পকলার বিষয়ে, এবং পরবর্তী পরিবেশনায় যাতে আমরা আমাদের শিল্পকলার উচ্চ স্তর প্রকাশ করতে পারি আর যাতে আমরা প্রত্যেকে যথাসম্ভব আমাদের ভূমিকায় অভিনয় সম্পাদন করতে পারি সেই উদ্দেশ্যে ঈশ্বর কীভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিচালনা করেন সেই বিষয়ে, এবং ঈশ্বরকে নিরাশ না করার বিষয়ে, আমাদের সম্পূর্ণ নতুন ধরনের আলোচনাচক্রও গঠিত হতেই পারে। আমি আশা করি যে আমার ভাই ও বোনেরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। এটিকে কেউই লঘুভাবে গ্রহণ কোরো না, কারণ ভূমিকা ভালোভাবে পালন করতে পারার বিষয়টি দু’একদিনে অর্জন করা যায় না; তার জন্য আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হয়, দীর্ঘকাল বাস্তবিক জীবনে গভীরভাবে প্রবিষ্ট হতে হয়, এবং বিভিন্ন রকমের জীবনের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। কেবল তখনই আমরা মঞ্চে দণ্ডায়মান হতে পারি। আমি আমার ভাই ও বোনেদের বিষয়ে পূর্ণ আশা রাখি। আমার বিশ্বাস যে তোমরা হতাশ বা অনুৎসাহী হয়ে পড়বে না, ঈশ্বর যা-ই করুন না কেন তোমরা সর্বদা উৎসাহে উত্তাল হবে: কখনোই সেই উৎসাহে ভাটা পড়বে না, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত ঈশ্বরের কাজ সম্পূর্ণ প্রকাশিত না হয়, ঈশ্বরের নির্দেশিত নাটক চূড়ান্ত উপসংহারে না পৌঁছায়, ততক্ষণ তোমরা শেষ অবধি উদ্যমী থাকবে। আমি তোমাদের কাছ থেকে আর কিছুই চাই না, শুধু আশা করি যে, তোমরা সহন করতে পারবে, ফলাফলের জন্য অস্থির হবে না, আমার করণীয় কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্যে আমার সাথে সহযোগিতা করবে, এবং কেউই কোনো ব্যাঘাত বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। কাজের এই অংশ সম্পন্ন হয়ে গেলে, ঈশ্বর তোমাদের কাছে সমস্ত কিছু প্রকাশ করবেন। আমার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে, ঈশ্বরের কাছে খতিয়ান দেওয়ার সময় আমি তোমাদের আমানত ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত করব। এটাই কি ভালো হবে না? নিজ-নিজ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে একে অপরের সহায় হওয়া—এ-ই কি সকলের পক্ষে নিখুঁত সমাধান নয়? বর্তমান সময়টা কঠিন, এখন তোমাদের মূল্য পরিশোধ করার প্রয়োজন রয়েছে। আমি যেহেতু এখন নির্দেশক, সেহেতু আশা করি যে তোমাদের কেউই এতে বিরক্ত নও। আমি এই ধরনের কাজই করছি। হয়ত একদিন আমি আরও উপযুক্ত কোনো “কর্মস্থলে” স্থানান্তরিত হব, আর তোমাদের জন্য আর বিষয়সকল কঠিন করে তুলব না। তোমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করতে চাও, তা আমি দেখাবো, যা কিছু শুনতে চাও, তা শুনতে-ও দেব। কিন্তু এখন নয়। এই কাজটাই হল বর্তমানের কাজ, আমি তোমাদের উন্মুক্ত স্বাধীনতা দিতে পারি না, বা তোমাদের ইচ্ছে মতো চাহিদা পূরণের অনুমোদন করতে পারি না। এতে আমার কাজ আরও কঠিন হয়ে যাবে; সত্যি বলতে, এতে কোনো ফলাফল পাওয়া যাবে না, এবং তোমাদের জন্য তা উপকারীও হবে না। তাই আজ, তোমাদের “অন্যায়” সহন করতেই হবে। যখন সেই দিন আসবে, আমার কাজের এই পর্যায় সম্পন্ন হবে, আমি তখন মুক্ত হয়ে যাব, আমাকে আর এইরকম গুরুভার বহন করব না, আমি তখন তোমরা যা চাইবে তা-ই স্বীকার করব; আমি তোমাদের চাহিদা পূরণ করব, যতক্ষণ তা তোমাদের জীবনের পক্ষে উপকারী হয়। আজ আমি একটি গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি পিতা ঈশ্বরের আদেশের পরিপন্থী হতে পারি না, আমার কাজের পরিকল্পনা ব্যাহত করতে পারি না। আমি আমার কার্যগত বিষয় দ্বারা ব্যক্তিগত বিষয়সকলের পরিচালনা করতে পারি না—আর আমি আশা করি তোমরা সকলেই আমাকে বুঝবে ও আমাকে ক্ষমা করবে, কারণ আমার সমস্ত কাজই পিতা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারেই সাধিত হয়; তিনি আমাকে যা করতে বলেন, সেগুলি যেমনই হোক না কেন, আমি তা করি, এবং আমি তাঁর ক্ষোভ অথবা ক্রোধ উদ্রেক করব না। আমি শুধু আমার করণীয় কাজই করি। তাই, পিতা ঈশ্বরের পক্ষ থেকে, আমি তোমাদের আরও কিছুক্ষণ সহন করার পরামর্শ দেব। কারোর চিন্তা করার দরকার নেই। আমার করণীয় কাজ সম্পন্ন করার পর, তোমরা ইচ্ছামত কাজ করতে পারো, ইচ্ছামত বিষয়সকল প্রত্যক্ষ করতে পারো—কিন্তু আমাকে আমার করণীয় কাজ সম্পন্ন করতেই হবে।

কাজের এই পর্যায়ে আমাদের থেকে পরম বিশ্বাস এবং ভালোবাসাই কাম্য। সামান্য অসাবধানতাবশত আমরা হোঁচট খেতে পারি, কারণ কাজের এই পর্যায়টি আগের অন্যান্য পর্যায়ের থেকে আলাদা: ঈশ্বর যা নিখুঁত করে তুলছেন তা হল মানবজাতির বিশ্বাস, যা একইসাথে অদৃশ্য ও অধরা। ঈশ্বর বাক্যকে বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং জীবনে রূপান্তরিত করেন। লোকেদের অবশ্যই এমন এক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যেখানে শত শত পরিমার্জনা সহ্য করা সত্ত্বেও তারা ইয়োবের চেয়েও বড় বিশ্বাসের অধিকারী হয়। ঈশ্বরকে কখনো ত্যাগ না করেই তাদের অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা এবং সর্বপ্রকারের অত্যাচার সহ্য করতে হবে। যখন তারা আমৃত্যু অনুগত থাকবে, এবং ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস রাখবে, তখনই ঈশ্বরের কাজের এই পর্যায়টি সম্পূর্ণ হবে। এই কর্মভার আমি গ্রহণ করেছি, তাই আশা করি যে আমার ভাই ও বোনেরা আমার দুর্দশা বুঝতে সক্ষম হবে, এবং আমার থেকে আর কিছু চাইবে না। পিতা ঈশ্বর আমার থেকে এটাই আকাঙ্ক্ষা করেন এবং এই বাস্তবিকতা থেকে পলায়নে আমি অক্ষম; আমাকে কেবলমাত্র আমার করণীয় কাজই করতে হবে। আমি শুধু আশা করি যে, তোমরা বলপূর্বক বিতর্ক ও বিকৃত যুক্তি ব্যবহার করবে না, যে তোমরা আরো অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন হবে, এবং, যে, বিষয়সকল অতি সরলীকৃতভাবে দেখবে না। তোমার চিন্তাভাবনা খুবই শিশুসুলভ, অতিশয় সাদাসিধে সরল। ঈশ্বরের কাজ তোমার কল্পনার অনুরূপ নয়; নিছক যদৃচ্ছভাবে তিনি কিছু করেন না; তেমনটা করলে তাঁর পরিকল্পনা বিনষ্ট হয়ে যেত। তোমাদেরও কি তাই মনে হয় না? আমি ঈশ্বরের কাজ করছি। নিছক যে লোকেদের জন্য এটা-ওটা করছি, বা যথেচ্ছভাবে কাজ করছি আর কিছু করি কি না করি তা নির্বিশেষে ব্যক্তিগতভাবে সবকিছুর আয়োজন করছি, এমন নয়। আজ বিষয়সকল অতও সহজ নয়। পিতা ঈশ্বর আমাকে নির্দেশকের কাজ সম্পাদনের জন্য পাঠিয়েছেন—তোমাদের কি মনে হয় আমি নিজেই তেমনটা আয়োজন করে করে নিজেকেই বেছে নিয়েছি? মানুষের ধারণাসমূহ প্রায়শই ঈশ্বরের কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, এই কারণেই একটা নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে কাজ করে যাওয়ার পরেও আমি মানুষজনের করা অনেক অনুরোধই পূরণ করতে পারি না, আর মানুষ আমাকে ভুল বোঝে। নিজেদের এই সমস্ত ধারণার বিষয়ে তোমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত; আমি এক এক করে সেগুলো তুলে ধরব না, আমি শুধু আমার কাজেরই ব্যাখ্যা দিতে পারি। এইসব আমার অনুভূতিতে বিন্দুমাত্রও আঘাত দেয় না। একবার এমনটা উপলব্ধি করে নিতে পারলে, তোমরা যেভাবে চাও সেভাবে বিষয়টিকে দেখতে পারো। ঈশ্বরের কাজ এভাবেই সম্পাদিত হয়, তাই আমি কোনো আপত্তি করব না; এই বিষয়সকল ব্যাখ্যা করার কোনো দায়ও আমার নেই। আমি নিছক বাক্যের কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য এসেছি, বাক্যের নির্দেশনায় এই নাটকের অভিনয় চালিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি। আমার আর কিছুই বলার প্রয়োজন নেই, আর কিছু করতেও আমি পারব না। আমার যা কিছু বলার ছিল, সমস্তটাই আমি ব্যাখ্যা করে দিয়েছি, তোমরা কী ভাবলে তা নিয়ে আমি ভাবিত নই আর তাতে আমার কিছু যায় আসেও না। তবে আমি এখনও তোমাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ঈশ্বরের কাজ তোমাদের কল্পনার অনুরূপ সরল বিষয় নয়। যত তা মানুষের ধারণার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হবে, ততই গভীরতর হবে তার তাৎপর্য; এবং যত তা মানুষের ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে তো আরোই নয়, ততই হবে তা মূল্যহীন, ততই থাকবে তাতে বাস্তবিক তাৎপর্যের ঘাটতি। এই বাক্যগুলো যত্ন সহকারে বিবেচনা করো—এই বিষয়ে আমি এটুকুই বলতে পারি। বাকিটা তোমরা নিজেরাই বিশ্লেষণ করে নিতে পারবে। আমি আর ব্যাখ্যা করব না।

লোকেরা কল্পনা করে যে ঈশ্বর নির্দিষ্ট উপায়ে কাজ করেন, কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা যা কিছু প্রত্যক্ষ করেছি ও অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, তা থেকে কি বলা যায় যে ঈশ্বরের কাজ সত্যিই মানুষের ধারণার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ? পৃথিবী সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি, কেউই ঈশ্বরের কাজের পর্যায়সমূহ বা নিয়মাবলী উপলব্ধি করতে পারে নি। তা করতে পারলে, ঈশ্বর আজ কীভাবে কাজ করেন, তা ধর্মীয় নেতারা উপলব্ধি করতে পারে নি কেন? কেন এত কমজনই বর্তমানের বাস্তবিকতা উপলব্ধি করতে পারে? এর থেকেই আমরা দেখি যে কেউই ঈশ্বরের কাজ উপলব্ধি করে না। মানুষকে শুধুমাত্র তাঁর আত্মার নির্দেশনা অনুসারেই কাজ করতে হবে; তাঁর কাজে শুধুমাত্র কঠোরভাবে নিয়ম প্রয়োগ করা উচিত নয়। তুমি যদি যীশুর প্রতিমূর্তি এবং কাজটির সাথে ঈশ্বরের বর্তমান কাজের সাথে তুলনা করো, তাহলে তা হবে ঠিক ইহুদিদের দ্বারা যিহোবার সাথে যীশুর সমন্বয়ের চেষ্টা করার মতোই বিষয়। এমনটা করার ফলে তুমি কি ব্যর্থ হচ্ছ না? এমনকি যীশুও অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজের বিষয়ে জানতেন না; তিনি শুধু জানতেন যে, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। তাহলে অন্যরা কীভাবে তা জানতে পারত? ঈশ্বর ভবিষ্যতে কী কাজ করতে চলেছেন তা তারা কীভাবে জানতে পারত? শয়তান দ্বারা আবিষ্ট মানুষের কাছে ঈশ্বর কীভাবে তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ করতে পারেন? এটা কি বোকামি নয়? ঈশ্বর চান যে তুমি তাঁর ইচ্ছা জানো এবং তা উপলব্ধি করতে পারো। তিনি তোমায় তাঁর ভবিষ্যতের কাজ বিবেচনা করতে বলেন না। আমাদের কেবলমাত্র ঈশ্বরবিশ্বাসের বিষয়েই বিবেচনা করতে হবে, তাঁর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করতে হবে, আমাদের বাস্তবিক সমস্যাগুলির নিরসনে বাস্তববাদী হতে হবে, এবং ঈশ্বরের কাছে বিষয়সকল কঠিন করে তোলা বা তাঁর জন্য সমস্যা সৃষ্টি করা উচিত নয়। আমাদের করণীয় কাজই করা উচিত; আমরা ঈশ্বরের বর্তমান কাজের মধ্যে যতক্ষণ থাকতে পারি, সেটাই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট! আমি তোমাদের এই ধরনের পথেরই নির্দেশনা দিই। আমরা যদি শুধুমাত্র ক্রমাগত অগ্রসর হওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করি, তাহলেই ঈশ্বর আমাদের কারোর সাথেই দুর্ব্যবহার করবেন না। তোমাদের বিগত বছরের অসাধারণ অভিজ্ঞতায় তোমরা অনেক দারুণ বিষয় অর্জন করেছ; আমি ভরসা করি যে, তোমরা এটা কঠিন হৃদয়ে নেবে না। আমি তোমাদের যে পথের নেতৃত্ব দিচ্ছি, সেটাই আমার লক্ষ্য এবং কাজ, তা বহু পূর্বেই ঈশ্বরের দ্বারা আদিষ্ট, যেকারণে আমাদের আজ এতদূর পথ অবধি অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও ছিল পূর্বনির্ধারিত। আমরা যে এমনটা করতে পেরেছি, সেটাই আমাদের কাছে মহান আশীর্বাদস্বরূপ, এবং এই পথ মসৃণ না হলেও, আমাদের মৈত্রী চিরকালীন, এবং তা যুগান্তর ধরে প্রবাহমান থাকবে। হর্ষ ও হাস্য, বা বিষাদ ও ক্রন্দন—সকলই হয়ে উঠুক এক সুন্দর স্মৃতি! তোমাদের হয়ত সচেতন যে আমার কাজের দিন আর বেশি বাকি নেই। আমার অনেক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এবং আমি আর এত ঘনঘন তোমাদের সঙ্গ দিতে পারব না। আমি আশা করি তোমরা আমাকে বুঝতে পারবে—কারণ আমাদের মূল মৈত্রী পরিবর্তিত হয়নি। হয়তো একদিন আমি আবার তোমাদের সামনে হাজির হব, এবং আশা করি তোমরা আমার পক্ষে বিষয়সকল কঠিন করে তুলবে না। সর্বোপরি, আমি তোমাদের থেকে আলাদা। আমি আমার কাজের জন্য চারপাশে ঘুরে বেড়াই, শুধুমাত্র হোটেলে বসে আরাম করে আমি দিন কাটাই না। তোমরা যেমনই হও না কেন, আমি শুধু আমার করণীয় কাজ করে যাই। আমাদের অতীতের ভাগ করে নেওয়া বিষয়সকল আমাদের মৈত্রিসূচক পুষ্পবৎ হোক, এমনটাই আমার আশা।

বলা যেতে পারে যে, এই পথ আমার দ্বারাই অর্গলমুক্ত হয়েছে, এবং তা তিক্ত অথবা মধুর যেমনই হোক না কেন, আমাকেই পথের নেতৃত্ব দিতে হবে। আমরা আজ পর্যন্ত এগোতে পেরেছি, তা সবই ঈশ্বরের অনুগ্রহ। অনেকে আমাকে ধন্যবাদ দেবে, কেউ কেউ আবার আমার নামে অভিযোগও করতে পারে—তবে সেগুলো কোনও ব্যাপারই না। আমি শুধু দেখতে চাই এই গোষ্ঠীর অর্জনীয় কী কী বিষয় তারা অর্জন করে ফেলেছে। এ হল এক উদ্‌যাপনীয় বিষয়। তাই, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তাদের সম্পর্কে আমার কোনও ক্ষোভ নেই; আমি শুধু যথাশীঘ্র সম্ভব আমার কাজ সম্পন্ন করতে চাই, যাতে অচিরেই ঈশ্বরের হৃদয় বিশ্রাম পেতে পারে। সেই সময়ে, আমার কাঁধে কোনো গুরুদায়িত্ব থাকবে না, ঈশ্বরের হৃদয়েও কোনো দুশ্চিন্তা থাকবে না। তোমরা কি তোমাদের সহযোগিতা উন্নত করতে চাও? ঈশ্বরের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করাটাকেই লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা কি শ্রেয় নয়? এই সময়কালে, ন্যায়সঙ্গত ভাবে বলা যায় যে, আমরা অসংখ্য কষ্ট সহ্য করেছি, সব রকমের আনন্দ ও দুঃখের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। সামগ্রিকভাবে, মূলত, তোমাদের প্রত্যেকের কার্যকারিতাই যথাযথ মানসম্পন্ন হয়েছে। হয়ত ভবিষ্যতে তোমাদের উপর আরো ভালো কোনো কাজ করার দায়িত্ব বর্তাবে, কিন্তু আমার চিন্তায় আবদ্ধ থেকে যেও না, কেবল নিজেদের করণীয় কাজ করে যেও। আমার যা করার ছিল, তা প্রায় হয়ে এসেছে; আশা করি তোমরা সর্বদা বিশ্বস্ত থাকবে, আমার কাজের বিষয়ে বেদনাতুর স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত হবে না। তোমাদের জানা উচিত যে, আমি কাজের কেবলমাত্র একটি পর্যায়কেই সম্পন্ন করতে এসেছি, অবশ্যই ঈশ্বরের সমস্ত কাজকে নয়। তোমাদের এই বিষয়ে অবশ্যই স্পষ্ট উপলব্ধি থাকতে হবে, এবং অন্য কোনো ধারণা পোষণ করলে চলবে না। ঈশ্বরের কাজ সম্পন্ন হওয়ার জন্য আরও অনেক উপায়ান্তর অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে; তোমরা সবসময় আমার উপর নির্ভর করতে পারবে না। হয়তো তোমরা ইতিমধ্যেই বুঝতে পেরেছ যে, আমি কাজের একটি অংশকেই সম্পন্ন করতে এসেছি, যা যিহোবা বা যীশুর প্রতিনিধিত্ব করে না; ঈশ্বরের কাজ বহুবিধ পর্যায়ে বিভক্ত, সেহেতু তোমাদের এই বিষয়ে অতিরিক্ত অনমনীয় হলে চলবে না। আমি যখন কাজ করছি, তখন তোমাদের আমার বাক্যই শুনতে হবে। প্রতিটি যুগে, ঈশ্বরের কাজ পরিবর্তিত হয়; এমনটা নয় যে সেগুলি সকলই অভিন্ন আদলে গড়া, এবং এমনটাও নয় যে প্রতিবার একই কাজের পুনরাবৃত্তি ঘটে। এবং প্রতিটি পর্যায়ে তাঁর কাজ যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, এবং যুগান্তরের সাথে সাথে তা পরিবর্তিতও হয়। সুতরাং, যেহেতু তুমি এই যুগে জন্মগ্রহণ করেছ, সেহেতু তোমায় অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্য ভোজন ও পান করতে হবে, এবং এই বাক্যগুলি পড়তে হবে। এমন এক দিন হয়ত আসতে পারে যখন আমার কাজ পরিবর্তিত হবে, সেক্ষেত্রেও তোমাদের অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রাখতে হবে; ঈশ্বরের কাজ ভ্রান্ত হতে পারে না। বাইরের জগত কীভাবে পরিবর্তিত হয় সেই বিষয়ে মনোযোগ দিও না। ঈশ্বর ভুল করতে পারেন না এবং তাঁর কাজ ভ্রান্ত হতে পারে না। বিষয়টা হল যে, কখনও কখনও তাঁর পুরোনো কাজ শেষ হয়ে যায় এবং তাঁর নতুন কাজের সূচনা ঘটে। তবে নতুন কাজ এসেছে বলেই যে পুরোনো কাজটি ভুল, এমনটাও কিন্তু নয়। এ হল এক ভ্রান্তি! ঈশ্বরের কাজকে সঠিক বা ভুল বলা যায় না, তা কেবল পূর্ববর্তী বা পরবর্তী হিসাবে অভিহিত হতে পারে। এ-ই হল মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাস-বিষয়ক নির্দেশিকা এবং এটিকে লঘুভাবে গ্রহণ করা উচিত নয়।

পূর্ববর্তী:  পথ … (৭)

পরবর্তী:  বিশ্বাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Connect with us on Messenger