সংযোজন: অধ্যায় ২

মানুষ যখন বাস্তববাদী ঈশ্বরকে দর্শন করে, যখন ব্যক্তিগতভাবে তারা স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে নিজেদের জীবন যাপন করে, তাঁর পাশাপাশি পথ চলে, এবং তাঁর সাথে বসবাস করে, তখন যে কৌতূহল তাদের অন্তরে তারা এতো বছর ধরে বহন করছে তা দূরে সরিয়ে রাখে। পূর্বে যে ঈশ্বরজ্ঞানের বিষয়ে বলা হয়েছে তা কেবল প্রাথমিক ধাপ মাত্র; মানুষের ঈশ্বরজ্ঞান থাকলেও, তাদের অন্তরে নানান নাছোড়বান্দা সংশয় রয়ে গিয়েছে: ঈশ্বর কোথা থেকে এসেছেন? ঈশ্বর কি আহার গ্রহণ করেন? ঈশ্বর কি সাধারণ মানুষের থেকে অনেকটাই আলাদা? ঈশ্বরের পক্ষে, সমুদয় মানুষের মোকাবিলা করা কি এক সহজসাধ্য কাজ, নিছক ছেলেখেলা মাত্র? ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত সকল বাক্যই কি স্বর্গের রহস্য-বৃত্তান্ত? তাঁর সমস্ত বাক্যই কি সকল সৃজিত সত্তার কথাবার্তা অপেক্ষা উচ্চমার্গের? ঈশ্বরের চক্ষু থেকে কি আলোক বিকীর্ণ হয়? এমন নানান সংশয়—মানুষের পূর্বধারণার সামর্থ্য এটুকুই। সবার আগে এই বিষয়গুলিই তোমাদের উপলব্ধি করা এবং এগুলির মধ্যে প্রবেশ করা বিধেয়। মানুষের ধারণায়, অবতাররূপী ঈশ্বর এখনো এক অনিশ্চিত ঈশ্বর। ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমে না হলে, মানুষ কখনোই আমায় উপলব্ধি করতে সক্ষম হতো না, এবং তাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে কখনো আমার কার্যাবলীকে প্রত্যক্ষ করতে পারতো না। শুধুমাত্র আমি দেহে পরিণত হয়েছি বলেই মানুষ আমার ইচ্ছা “উপলব্ধিতে অক্ষম”। আমি দেহরূপ ধারণ না করে এখনো স্বর্গেই অধিষ্ঠান করলে, এখনো আধ্যাত্মিক জগতেই থাকলে, মানুষ আমাকে “জানতো”; মাথা নত করে তারা আমার আরাধনা করতো, এবং নিজেদের অভিজ্ঞতাসমূহের মাধ্যমে আমার সম্পর্কে তাদের “জ্ঞানের” বিষয়ে আলোচনা করতো—কিন্তু এজাতীয় জ্ঞান কোন কাজেই বা লাগতো? এক সাপেক্ষ বিন্দু হিসাবে এর কী-ই বা মূল্য থাকতো? মানুষের পূর্বধারণা থেকে আগত জ্ঞান কি বাস্তব হতে পারে? মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত জ্ঞানে আমার কাজ নেই—আমি ব্যবহারিক জ্ঞান চাই।

আমার ইচ্ছা তোমাদের কাছে সদাই প্রকাশিত, এবং আমার প্রদীপ্তি ও আলোকদান নিয়তই বিদ্যমান। যখন সরাসরি আমি দেবত্বের দ্বারা কার্যাদি সম্পাদন করি, তখন মস্তিষ্কের মধ্য দিয়ে তা পরিশ্রুত হয় না, এবং এতে “স্বাদবর্ধক মশলাপাতি” যোগ করার দরকার পড়ে না—এ হল দেবত্বের প্রত্যক্ষ ক্রিয়াকলাপ। মানুষ কোন কাজে সক্ষম? সৃষ্টির কাল থেকে আজ অবধি সবকিছুই কি আমার দ্বারাই ব্যক্তিগতভাবে নিষ্পন্ন হয় নি? অতীতে, আমি সাতগুণ প্রবলতর আত্মার বিষয়ে বলেছিলাম, কিন্তু তাঁর সারসত্য উপলব্ধিতে কেউই সক্ষম ছিল না—এমনকি এই বিষয়ে অবহিত হলেও সম্পূর্ণ উপলব্ধিতে তারা অপারগ ছিল। যখন আমি মানবতার মাঝে দেবত্বের দ্বারা পরিচালিত কার্যে রত, তখন সেই কার্যটি যেহেতু এমন এক পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয় যা মানুষের দৃষ্টিতে অতিপ্রাকৃতিক নয়, বরং স্বাভাবিক বলেই প্রতিভাত হয়, সেহেতু এই কার্যকে পবিত্র আত্মার কার্য বলে উল্লেখ করা হয়। দেবত্বের মাধ্যমে কার্য নির্বাহের সময়, যেহেতু আমি মানুষের পূর্বধারণার দ্বারা সীমায়িত হই না, এবং যেহেতু আমি মানুষের পূর্বধারণায় বিদ্যমান “অতিপ্রাকৃতিক”-এর সীমানার অধীন নই, সেহেতু এই কার্য তৎক্ষণাৎ ফলপ্রসূ হয়; এই কার্য সমস্যার মর্মস্থলে গিয়ে পৌঁছায়, এবং সরাসরি মূল বিষয়টিকে বিদ্ধ করে। ফলস্বরূপ, কার্যের এই ধাপটি বিশুদ্ধতর; পূর্বেই তুলনায় এটি দ্বিগুণ বেগবান, মানুষের উপলব্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং আমার বাক্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সকল মানুষ এর নাগাল পেতে দ্রুত ধাবিত হয়। যেহেতু ফলাফল স্বতন্ত্র, যেহেতু আমার কার্যের পদ্ধতি, প্রকৃতি, ও বিষয়বস্তু অভিন্ন নয়—তদুপরি, যেহেতু আমি দেহরূপে স্বীয় কার্যের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটিয়েছি, সেহেতু, পূর্ববর্তী আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, এই পর্যায়ের কার্যকে “সাতগুণ প্রবলতর আত্মার কার্য” বলে অভিহিত করা হয়। এ কোনো বিমূর্ত বিষয় নয়। তোমাদের অভ্যন্তরে আমার কার্যসাধন পদ্ধতির বিকাশ, এবং রাজ্যের আবির্ভাবের পর, সাতগুণ প্রবলতর আত্মা তাঁর কার্য সম্পাদন শুরু করেন, এবং এই কার্য ক্রমাগত গভীর থেকে আরো গভীরগামী এবং তীব্রতর হয়ে ওঠে। সকল মানুষ যখন ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করে এবং সকলেই যখন ঈশ্বরের আত্মাকে মানুষের মাঝে কার্যরত দেখতে পায়, তখন আমার অবতাররূপের পূর্ণ তাৎপর্য পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। সারসংক্ষেপ করার কোনো দরকার পড়ে না—মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তা জেনে যায়।

আমার কার্যসাধনের পদ্ধতি, আমার কার্যের ধাপসমূহ, আমার আজকের বাক্যের ধ্বনিচরিত্র, ইত্যাদি নানান বিষয় বিবেচনা করে, একমাত্র এই মুহূর্তে আমার মুখনিঃসৃত বাক্যসমূহই হল প্রকৃত অর্থে “সপ্তআত্মার উচ্চারণমালা”। অতীতেও আমি বাক্য উচ্চারণ করেছিলাম বটে, কিন্তু তা করা হয়েছিল গির্জা-নির্মাণকালে। তা ছিল কোনো উপন্যাসের মুখবন্ধ ও সূচিপত্রের মতো—তা ছিল সারসত্যবিহীন; সারসত্যের নিরিখে, কেবলমাত্র আজকের উক্তিসমূহকেই সপ্তআত্মার উচ্চারণমালা হিসাবে অভিহিত করা যায়। “সপ্তআত্মার উচ্চারণমালা” সিংহাসন থেকে আগত বাক্যাবলীর প্রতি নির্দেশ করে, অর্থাৎ, সেগুলি সরাসরি দেবত্বে উচ্চারিত হয়। যে মুহূর্তে আমার উক্তিসমূহ স্বর্গের রহস্যনিচয় উদ্ঘাটনের দিকে মোড় নিয়েছিল, ঠিক তখনই আমি সরাসরি দেবত্ব থেকে বাক্যোচ্চারণ করেছিলাম। বাক্যান্তরে, ঠিক তখনই, মানবতার দ্বারা সীমায়িত না থেকে, আমি প্রত্যক্ষভাবে আধ্যাত্মিক জগতের সকল রহস্য ও পরিস্থিতি প্রকাশ করেছিলাম। আমি কেন এমন বলছি যে, আমি পূর্বে মানবতার সীমারেখার অধীন ছিলাম? এই বিষয়টি ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের দৃষ্টিতে, কেউই স্বর্গের রহস্যসমূহের উদ্ঘাটনে সক্ষম নয়; স্বয়ং ঈশ্বর বলে না দিলে, পৃথিবীর কেউ এই রহস্যগুলির বিষয়ে জানতে পারতো না। তাই, মানুষের পূর্বধারণাগুলিকে উদ্দেশ্য করে আমি জানাই যে, অতীতে কোনো রহস্যই আমি উদ্ঘাটিত করি নি, কারণ আমি মানবতার দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিলাম। আরো নির্দিষ্ট করে বললে অবশ্য, বিষয়টি এমনতরো নয়: আমার কার্যের চরিত্র-পরিবর্তনের সাথেসাথে আমার বাক্যের বিষয়বস্তুও ভিন্নতর হয়ে যায়; এবং সেকারণেই, দেবত্বের মধ্যে আমার সেবাব্রত কার্যের সূচনাকালেই আমি রহস্যসমূহ উদ্ঘাটিত করেছিলাম; অতীতে, সকল মানুষের নজরে যা স্বাভাবিক এমন এক পরিস্থিতিতে আমাকে কার্য সম্পাদন করতে হয়েছিল, এবং যে বাক্যসমূহ আমি উচ্চারণ করেছিলাম তা মানুষের পূর্বধারণা মতে অর্জনসাধ্য ছিল। কিন্তু যখন আমি রহস্যসমূহ উন্মোচন করতে শুরু করি, তখন সেগুলির কোনোটিই মানুষের পূর্বধারণার আয়ত্তসাধ্য ছিল না—মানুষের চিন্তাভাবনার থেকে সেগুলি ছিল স্বতন্ত্র। তাই, আনুষ্ঠানিকভাবে আমি দেবত্বের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখার দিকে মোড় নিতে আরম্ভ করি, এবং প্রকৃত অর্থে সেগুলিই ছিল সপ্তআত্মার উচ্চারণমালা। অতীতের বাক্যসমূহ সিংহাসন থেকে উচ্চারিত হলেও, সেগুলি মানুষের অর্জনসাধ্যতার ভিত্তিতে উক্ত হয়েছিল, আর সেকারণেই তা সরাসরি দেবত্বের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয় নি—ফলস্বরূপ, প্রকৃত অর্থে সেগুলি সপ্তআত্মার উচ্চারণমালা ছিল না।

পূর্ববর্তী:  অধ্যায় ১১

পরবর্তী:  অধ্যায় ১২

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Connect with us on Messenger