অধ্যায় ১১

মানুষের খালি চোখে, এই সময়কালে ঈশ্বরের উচ্চারণে কোনো পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হয় না, তার কারণ মানুষ ঈশ্বরের কথা বলার বিধানগুলি উপলব্ধি করতে অক্ষম, এবং তারা তাঁর বাক্যসমূহের পূর্বাপর প্রসঙ্গ উপলব্ধি করে না। ঈশ্বরের বাক্যসমূহ পাঠ করার পর, মানুষ বিশ্বাস করে না যে তাতে নতুন কোনো রহস্য আছে; ফলে, তারা অসাধারণভাবে আনকোরা জীবনযাপনে অক্ষম, তার বদলে তারা স্থবির ও নিষ্প্রাণ জীবন যাপন করে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ঈশ্বরের উচ্চারণে অর্থের এক গভীরতর স্তর রয়েছে, যা মানুষের কাছে একইসঙ্গে অগাধ ও অনধিগম্য। আজ, ঈশ্বরের এরকম বাক্যসমূহ পাঠ করার সৌভাগ্য অর্জনই হল মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। এই বাক্যগুলি কেউ যদি পাঠ না করত, মানুষ তাহলে সারাটা জীবন উদ্ধত, নিজের নৈতিকতা বিষয়ে গর্বিত, নিজের সম্পর্কে অজ্ঞ, এবং নিজের ব্যর্থতাসমূহের সম্পর্কে অনবহিতই রয়ে যেত। ঈশ্বরের সুগভীর, অতল বাক্যসমূহ পাঠ করার পর, মানুষ সঙ্গোপনে সেগুলির প্রশংসা করে, আর তাদের হৃদয়ে থাকে মিথ্যার দ্বারা অকলুষিত প্রকৃত প্রত্যয়; তাদের হৃদয় পরিণত হয় অকৃত্রিম সামগ্রীতে, নকল পণ্যে নয়। মানুষের অন্তরে ঠিক এরকমটাই ঘটে। প্রত্যেকের হৃদয়েই তাদের নিজ নিজ কাহিনী রয়েছে। যেন তারা মনে মনে বলছে: “খুব সম্ভবত ঈশ্বর স্বয়ং এগুলি বলেছিলেন—ঈশ্বর না হলে, এই রকম বাক্যগুলি আর কে উচ্চারণ করতে পারে? আমি কেন এগুলি বলতে পারি না? আমি কেন এইরকম কার্য সম্পাদনে অক্ষম? মনে হচ্ছে, ঈশ্বর-কথিত ঈশ্বরের যে অবতাররূপ তিনি সত্যিই বাস্তব, এবং তিনিই স্বয়ং ঈশ্বর! আমি আর সন্দেহ প্রকাশ করবো না। অন্যথায়, এমন হতে পারে যে যখন ঈশ্বরের হাত আবির্ভূত হবে, তখন অনুশোচনার পক্ষে অত্যন্ত দেরী হয়ে যাবে! …” অধিকাংশ মানুষ মনে মনে এরকমটাই ভেবে থাকে। বলা যায়, ঈশ্বরের কথা বলার সূচনাকাল থেকেআজ অবধি, ঈশ্বরের বাক্যসমূহের অবলম্বন ছাড়া সকল মানুষই এক-এক করে খসে পড়তো। কেন বলা হয় যে এই সমস্ত কার্যই স্বয়ং ঈশ্বর দ্বারা সম্পাদিত হয়, মানুষের দ্বারা নয়? ঈশ্বর যদি না গির্জার জীবনের সমর্থনে বাক্যসমূহ ব্যবহার না করতেন, প্রত্যেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। এটি কি ঈশ্বরের ক্ষমতা নয়? এটি কি সত্যিই মানুষের বাগ্মিতা? এটি কি মানুষের একক প্রতিভা? একেবারেই না! শরীরের ব্যবচ্ছেদ ব্যতীত, কেউ জানবেই না যে তাদের শিরায় শিরায় কোন প্রকার রক্ত প্রবাহিত হয়, তারা জানবে না তাদের কয়টি হৃদপিণ্ড আছে, কিংবা কতগুলি মস্তিষ্ক রয়েছে, আর তারা সকলেই ভাববে তারা বুঝি ঈশ্বরকে জানে। তারা কি জানে না যে তাদের জ্ঞানের ভিতরে এখনও বিরোধিতা রয়েছে? তাই, বিস্ময়ের কিছুই নেই যখন ঈশ্বর বলেন, “মানবজাতির প্রতিটি ব্যক্তির আমার আত্মার দ্বারা খুঁটিয়ে দেখা স্বীকার করে নেওয়া উচিত, তাদের নিজ নিজ প্রতিটি বাক্য ও কর্মকে নিবিড়ভাবে নিরীক্ষণ করা উচিত, উপরন্তু, আমার বিস্ময়কর কার্যগুলি বিবেচনা করে দেখা উচিত।” এ থেকে এটি দেখা যায় যে ঈশ্বরের বাক্যসমূহ লক্ষ্যহীন আর ভিত্তিহীন নয়। ঈশ্বর কোনো মানুষের সঙ্গে কখনও কোনো অন্যায় আচরণ করেননি; এমনকি তার যাবতীয় বিশ্বাস সত্ত্বেও ইয়োবকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়নি—তাকেও ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছিল, এবং তার লজ্জা লুকাবার কোনো স্থান ছিল না। আর আজকের মানুষের কথা তো বলাই বাহুল্য। তাই, ঈশ্বর অব্যবহিত পরেই জিজ্ঞাসা করেন: “পৃথিবীতে রাজ্যের আগমনের সময় তোমরা কেমন অনুভব করো?” ঈশ্বরের প্রশ্ন খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, কিন্তু মানুষকে তা বিভ্রান্তি ফেলে: “আমরা কেমন অনুভব করি? আমরা এখনও জানি না কবে রাজ্যের আগমন ঘটবে, তাহলে আমরা অনুভূতির কথা কীকরে কথা বলতে পারি? তার উপরে, আমাদের হাতে কোনো সূত্রই তো নেই। আমাকে যদি কিছু অনুভব করতেই হয়, তাহলে তা ‘বিস্মিত হওয়া’ ছাড়া আর কিছুই হবে না।” প্রকৃতপক্ষে, এই প্রশ্নটি ঈশ্বরের বাক্যসমূহের লক্ষ্য নয়। সর্বোপরি, এই একটি বাক্য—“যখন আমার পুত্র এবং আমার লোকেরা আমার সিংহাসনের দিকে ধাবিত হয়, তখন আমি মহান শুভ্র সিংহাসনের সম্মুখে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করি”—সমগ্র আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের বিকাশকে সংক্ষিপ্তাকারে বিবৃত করে। আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে এই সময়ে ঈশ্বর কী করতে চান তা কেউ জানে না, আর শুধুমাত্র ঈশ্বর এই বাক্যগুলি উচ্চারণ করলে তবেই একমাত্র মানুষের মধ্যে সামান্য জাগরণ ঘটে। ঈশ্বরের কার্যে নানাবিধ ধাপ থাকার ফলে, ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঈশ্বরের কার্যেও হেরফের ঘটে। এই সময়ে, ঈশ্বর প্রধানত ঈশ্বরের পুত্র এবং লোকেদের উদ্ধার করেন, অর্থাৎ, স্বর্গদূতদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে, ঈশ্বরের পুত্র ও লোকেরা বিহিত হওয়া আর বিদীর্ণ হওয়া মেনে নিতে শুরু করে, আনুষ্ঠানিকভাবে তারা তাদের চিন্তাভাবনা আর পূর্বধারণাসমূহ অপসারণ করতে আর এই পৃথিবীর যেকোন নিদর্শনকে বিদায় জানাতে শুরু করে; অন্য কথায়, ঈশ্বর কথিত “মহান শুভ্র সিংহাসনের সম্মুখে বিচার” আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। যেহেতু এই বিচার ঈশ্বরের, ঈশ্বরকে তাঁর বক্তব্য উচ্চারণ করতেই হবে—আর বিষয়বস্তু বিভিন্ন হলেও, লক্ষ্য সর্বদাই একই থাকে। আজ, ঈশ্বর যে স্বরে কথা বলেন তা বিচার করলে মনে হয় যে তাঁর বাক্যসমূহ নির্দিষ্ট এক গোষ্ঠীর মানুষের প্রতি উদ্দিষ্ট। প্রকৃতপক্ষে, সর্বোপরি, এই বাক্যসমূহ সকল মানবজাতির প্রকৃতিকে সম্ভাষণ করে। সেগুলি সরাসরি মানুষের স্নায়ুরজ্জুর উপর ছুরি চালায়, সেগুলি মানুষের অনুভূতির তোয়াক্কা করে না, আর সেগুলি মানুষেরর উপাদানের সামগ্রিকতাকে প্রকাশ করে, কোনোকিছু বাদ দেয় না, কোনোকিছুই পার পায় না। আজ থেকে শুরু করে, ঈশ্বর আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের প্রকৃত মুখাবয়ব প্রকাশ করেন, আর এইভাবে “আমার আত্মার কণ্ঠস্বরকে সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের উদ্দেশ্যে বিমুক্ত করে দেন।” চূড়ান্তভাবে যে প্রভাবটি অর্জিত হয় তা হল: “আমার বাক্যসমূহের দ্বারা, আমি আকাশ ও পৃথিবীর সবকিছুর মধ্যে থাকা সকল মানুষ ও বস্তুকে প্রক্ষালন করে নির্মল করে তুলবো, যাতে ভূখণ্ড আর কলুষিত ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ না থেকে, বরং একটি পবিত্র রাজ্যে পরিণত হয়।” এই বাক্যগুলি রাজ্যের ভবিষ্যৎ রূপকে উপস্থাপন করে, যা সম্পূর্ণতই খ্রীষ্টের রাজ্য, ঠিক ঈশ্বর যেমনটা বলেছেন, “সবই উৎকৃষ্ট ফল, সকলেই পরিশ্রমী কৃষক।” স্বাভাবিকভাবেই, এটি শুধু চীনদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড জুড়ে ঘটবে।

ঈশ্বর কথা বলতে এবং কাজ করতে শুরু করলে তবেই মানুষ তাদের ধারণায় তাঁর সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান লাভ করে। শুরুতে, এই জ্ঞান শুধুমাত্র তাদের পূর্বধারণাতেই থাকে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, মানুষের চিন্তাভাবনা উত্তরোত্তর অকার্যকর এবং মানুষের ব্যবহারের পক্ষে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে; ফলে, ঈশ্বরের সকল বাক্যকে তারা এতটাই বিশ্বাস করে ফেলে যে ওগুলি “তাদের চেতনায় বাস্তববাদী ঈশ্বরের জন্য একটি স্থান সৃজন করে।” শুধুমাত্র তাদের চেতনাতেই মানুষের বাস্তববাদী ঈশ্বরের জন্য একটি স্থান রয়েছে। যদিও বাস্তবে, তারা ঈশ্বরকে জানে না, আর ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু আওড়ায় না। তবুও অতীতের সাথে তুলনা করলে, তাদের অসাধারণ উন্নতি ঘটেছে, যদিও স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের থেকে এখনও বিরাট পার্থক্য রয়েছে। ঈশ্বর কেন সর্বদা বলেন, “প্রতিদিন আমি মানুষের বিরামহীন প্রবাহের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাই, আর প্রতিদিন আমি প্রতিটি মানুষের অন্তরে কার্য করি”? ঈশ্বর যত বেশি এইধরণের কথা বলেন, তত বেশি করে মানুষ আজকের স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের কাজের সঙ্গে সেগুলির তুলনা করতে পারে, আর তাই বাস্তববাদী ঈশ্বরকে তারা বস্তুতই আরো ভালো করে জানতে পারে। যেহেতু ঈশ্বরের বাক্যসমূহ অবতাররূপী দেহের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথিত হয় আর মনুষ্যজাতির ভাষা ব্যবহার করে উচ্চারিত হয়, ফলে মানুষ পার্থিব বিষয়াদির মাপকাঠিতে ঈশ্বরের বাক্যগুলির মূল্যায়ন করতে সক্ষম হয়, আর এইভাবে এক বৃহত্তর ফলাফল অর্জিত হয়। এর সাথেই, ঈশ্বর বারংবার মানুষের অন্তরে “আমার” প্রতিমূর্তি আর বাস্তবের “আমি”-র কথা বলেন, যা মানুষকে তাদের অন্তরের ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিকে শুদ্ধতর করে তুলতে আরো আগ্রহী করে তোলে, আর এইভাবে তাদের স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরকে জানতে আর তাঁর সাথে সংযুক্ত হতেও প্রণোদিত করে তোলে। এই হল ঈশ্বরের বাক্যসমূহের প্রজ্ঞা। ঈশ্বর যত বেশি এই ধরণের কথা বলেন, মানুষের ঈশ্বর-জ্ঞানের পক্ষে তা তত হিতকর হয়, আর তাই ঈশ্বর বলেন, “যদি আমি দেহে পরিণত না হতাম, তাহলে মানুষ কখনই আমাকে জানতো না, এবং মানুষ আমাকে জানতে পারলেও, সেই জ্ঞান তখনো কি একটা ধারণাই হতো না?” সত্যিই, মানুষকে যদি তাদের নিজ পূর্বধারণা অনুযায়ী ঈশ্বরকে জানতে হতো, সেটা তাদের পক্ষে সহজ হতো; তারা নিরুদ্বেগ ও খুশি থাকতো, আর এইভাবে মানুষের অন্তরে ঈশ্বর চিরকাল অস্পষ্ট থেকে যেতেন, বাস্তববাদী হতেন না, যাতে প্রমাণ হতো যে ঈশ্বর নন, শয়তানই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপর কর্তৃত্ব করে; এইভাবে, ঈশ্বরের “আমি আমার ক্ষমতা প্রত্যাহার করে নিয়েছি”—বাক্যটি চিরকালের মত শূন্যগর্ভ উক্তি রয়ে যেতো।

যখন দেবত্ব প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে শুরু করে, ঠিক সেই সময়ে রাজ্যও আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের পৃথিবীতে অবতরণ করে। কিন্তু এখানে বলা হয় যে রাজ্য মানুষের মাঝে নেমে আসে, রাজ্য মানুষের মাঝে রূপ পরিগ্রহ করে এমন বলা হয় না—আর তাই আজ শুধু রাজ্যের নির্মাণের কথা বলা হয়, কীভাবে তা আকার ধারণ করে তা নয়। ঈশ্বর কেন সর্বদা বলেন, “সবকিছু নীরব হয়ে গেল”? সবকিছুই স্থগিত হয়ে নিশ্চল হয়ে পড়ল এমনটা কী হতে পারে? এমনটা কী হতে পারে যে বিরাট পর্বতগুলি সত্যিই নীরব হয়ে গেল? তাহলে মানুষের এই বিষয়ে কোনো বোধ নেই কেন? ঈশ্বরের বাক্যগুলি কি ভুল হতে পারে? অথবা ঈশ্বর কি অতিরঞ্জন করছেন? যেহেতু ঈশ্বর যা কিছু করেন সে সবই বিশেষ একটি পরিবেশের মধ্যে সম্পাদিত হয়, সেহেতু কেউই সে সম্পর্কে অবগত নয় বা স্বচক্ষে তা প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম নয়, আর মানুষ শুধুমাত্র ঈশ্বরের কথা শ্রবণই করতে পারে। ঈশ্বর যে মহিমার সাথে কাজ করেন তার কারণে, যখন ঈশ্বরের আগমন ঘটে, তখন মনে হয় যেন আকাশে ও পৃথিবীতে এক বিরাট পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে; আর ঈশ্বরের কাছে, মনে হয় যেন সকলেই এই মুহূর্তটা চাক্ষুষ করছে। আজ, বাস্তব তথ্যগুলি এখনও এসে পৌঁছায়নি। মানুষ কেবল ঈশ্বরের বাক্যসমূহের আক্ষরিক অর্থের খণ্ডাংশ থেকে সামান্য একটু জেনেছে। প্রকৃত অর্থ সেই সময়ের প্রতীক্ষায় রয়েছে যখন তারা নিজেদের স্বীয় পূর্বধারণা থেকে পরিশুদ্ধ করবে; একমাত্র তখনই তারা ঈশ্বরের অবতাররূপ আজ পৃথিবীতে ও আকাশে কী করছেন সে সম্পর্কে অবগত হবে। চীনদেশে ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে কেবল অতিকায় লাল ড্রাগনের বিষই নেই। তাই, অতিকায় লাল ড্রাগনের প্রকৃতিও তাদের মধ্যে আরও সুপ্রতুল ও আরও স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বর এ সম্পর্কে সরাসরি কথা বলেন না, অতিকায় লাল ড্রাগনের বিষের ব্যাপারে সামান্য উল্লেখ করেন মাত্র। এই ভাবে, মানুষের ক্ষতচিহ্নগুলি তিনি সরাসরি অনাবৃত করেন না, যা মানুষের উন্নতির পক্ষে আরও বেশি হিতকর। অতিকায় লাল ড্রাগনের সন্তান-সন্ততিরা অন্যদের সমক্ষে অতিকায় লাল ড্রাগনের বংশধর বলে সম্বোধিত হতে পছন্দ করে না। যেন “অতিকায় লাল ড্রাগন” শব্দগুলি তাদের লজ্জায় ফেলে; তাদের কেউই এই শব্দগুলি উচ্চারণ করতে চায় না, আর তাই ঈশ্বর শুধু বলেন, “আমার কার্যের এই পর্যায়টি প্রাথমিকভাবে তোমাদের উপরে নিবদ্ধ, এবং এটি চীনদেশে আমার অবতাররূপ ধারণের তাৎপর্যের একটি দিক।” আরও যথাযথভাবে, ঈশ্বর প্রধানত অতিকায় লাল ড্রাগনের সন্তান-সন্ততিদের আদি প্রতিনিধিদের জয় করতেই এসেছেন, যা হল চীনদেশে ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের তাৎপর্য।

“আমি যখন ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মধ্যে আসি, স্বর্গদূতরাও একইসাথে পরিচালনা করার কাজ শুরু করে।” প্রকৃতপক্ষে, এটা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হয় না যে স্বর্গদূতরা যখন সকল মানুষের মাঝে তাদের কার্য-সম্পাদন শুরু করে একমাত্র তখনই ঈশ্বরের আত্মা মানুষের পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। তার বদলে, এই দু’টি কার্য—দেবত্বের কার্য এবং স্বর্গদূতদের পরিচালনার কার্য—এগুলি একইসাথেই সম্পাদিত হয়। এরপর, ঈশ্বর স্বর্গদূতদের পরিচালনার কার্য সম্পর্কে অল্প কিছু কথা বলেন। তিনি যখন বলেন যে “সকল পুত্র ও লোকজন শুধু যে বিচার আর পথনির্দেশ প্রাপ্ত হয় তা নয়, উপরন্তু তারা স্বচক্ষে সব ধরনের দর্শনের ঘটনা চাক্ষুষ করতেও সক্ষম হয়,” অধিকাংশ মানুষেরই “দর্শন” শব্দটি সম্পর্কে অজস্র কল্পনা রয়েছে। দর্শন হল মানুষের কল্পনায় সংঘটিত অতিপ্রাকৃত ঘটনাসমূহ। কিন্তু স্বয়ং বাস্তববাদী ঈশ্বরের সম্পর্কে জ্ঞানই ওই কার্যের বিষয়বস্তু থেকে যায়। দর্শন হল স্বর্গদূতদের কার্য সম্পাদনের উপায়। এগুলি মানুষকে অনুভূতি বা স্বপ্ন দিতে পারে, যা তাদের স্বর্গদূতদের অস্তিত্ব উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। কিন্তু স্বর্গদূতরা মানুষের কাছে অদৃশ্যই থাকে। তারা যে পদ্ধতিতে ঈশ্বরের পুত্র এবং লোকেদের মধ্যে কার্য সম্পাদন করে তা হল প্রত্যক্ষভাবে তাদের আলোকিত ও প্রদীপ্ত করা, সেই সাথে তাদের মোকাবিলা ও বিচূর্ণ করা। তারা নৈতিক উপদেশ প্রায় দেয় না বললেই চলে। স্বাভাবিকভাবেই, মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক আদানপ্রদান এর ব্যতিক্রম; চীনদেশের বাইরের দেশগুলিতে ঠিক এটাই ঘটছে। ঈশ্বরের বাক্যসমূহের মধ্যে ধরা রয়েছে সমগ্র মানবজাতির জীবনধারণের পরিস্থিতির উদ্ঘাটন—স্বাভাবিকভাবে, এটি প্রাথমিকভাবে অতিকায় লাল ড্রাগনের সন্তানাদির দিকেই উদ্দিষ্ট। সমগ্র মানবজাতির বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে থেকে, ঈশ্বর সেগুলিকে মনোনীত করেন যেগুলি আদর্শ নমুনা হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে। এইভাবে, ঈশ্বরের বাক্যসমূহ মানুষকে অনাবৃত করে, এবং তাদের কোনো লজ্জাবোধ নেই, অথবা জ্যোতির্ময় আলো থেকে আত্মগোপন করার মতো সময় তাদের নেই, এবং তারা তাদের নিজেদের খেলাতেই পরাজিত হয়েছে। মানুষের নানাবিধ আচার-আচরণ হল প্রতিমূর্তির আধিক্য, যা সেই সুপ্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি ঈশ্বর এঁকে এসেছেন, আর যা তিনি আজ থেকে আগামীদিন পর্যন্তও এঁকে চলবেন। তিনি শুধু মানুষের কদর্যতাই অঙ্কন করেন: কেউ অন্ধকারে কাঁদছে, দেখে মনে হয় তারা তাদেরখোয়ানো দৃষ্টির জন্য বিলাপ করছে, কেউ বা হাসছে, অতিকায় ঢেউয়ের দোলায় কেউ উথাল-পাথাল হচ্ছে, কেউ উঁচু-নিচু পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে চলেছে, কেউ বা বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মাঝে কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে, ধনুকের টংকারে চমকিত পাখির মতো ভয়ে কম্পমান, পাহাড়ে বন্য প্রাণীরা তাকে খেয়ে ফেলবে এই আশঙ্কায় ভীষণ সন্ত্রস্ত। ঈশ্বরের হাতে, এইসব কদর্য আচরণ মর্মস্পর্শী, প্রায় জীবন্ত চিত্রপটে পরিণত হয়, যাদের অধিকাংশ অতি ভয়ঙ্করদর্শন, নয়তো মানুষের গায়ে কাঁটা দেওয়ার এবং তাদের হতভম্ব ও বিভ্রান্ত করার পক্ষে যথেষ্ট। ঈশ্বরের চোখে, মানুষের মধ্যে যা কিছু প্রকাশিত হয় তা কদর্যতা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং যদিও বা তা সহানুভূতির উদ্রেক করেও থাকে, তবু তা কদর্যই। ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে পার্থক্যের মূলবিন্দুটি হল, অন্যের প্রতি সহৃদয়তা প্রদর্শনের প্রবণতার মধ্যেই মানুষের দুর্বলতার বীজটি নিহিত রয়েছে। তবে, ঈশ্বর মানুষের প্রতি সর্বদাই একরকমই থেকে গিয়েছেন, যার অর্থ তাঁর মনোভাব সর্বদাই অপরিবর্তিত ছিল। মানুষ যতটা কল্পনা করে সর্বদা তিনি ততটা সহানুভূতিশীল নন, ঠিক একজন অভিজ্ঞ মায়ের মতই যার সন্তানেরা সর্বদাই তার মনের পুরোভাগে থাকে। বাস্তবে, ঈশ্বর যদি অতিকায় লাল ড্রাগনকে জয় করার জন্য একগুচ্ছ পদ্ধতি ব্যবহার করতে না চাইতেন, তাহলে নিজেকে তিনি মানুষের সীমাবদ্ধতার মুখাপেক্ষী হতে দিয়ে এরকম অপমানিত হওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতেন না। ঈশ্বরের স্বভাবানুযায়ী, মানুষ যা যা করে আর বলে থাকে, তা ঈশ্বরের ক্রোধকে প্ররোচিত করে, আর তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত। ঈশ্বরের চোখে, তাদের একজনও উপযুক্ত মানসমন্বিত নয়, আর তাদের সকলকেই ঈশ্বরের আঘাত ভোগ করতে হবে। চীনদেশে ঈশ্বরের কার্যের নীতিসমূহের জন্য, উপরন্তু, অতিকায় লাল ড্রাগনের প্রকৃতির কারণে, তদতিরিক্ত চীনদেশ অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশ এবং এখানেই ঈশ্বরের অবতাররূপের বাসস্থান হওয়ায়, ঈশ্বরকে তাঁর ক্রোধ গলাধঃকরণ করে অতিকায় লাল ড্রাগনের অপত্যদের জয় করতে হবে; তবুও তিনি অতিকায় লাল ড্রাগনের সন্তানাদিকে সর্বদাই ঘৃণা করবেন—অর্থাৎ, তিনি অতিকায় লাল ড্রাগন থেকে আগত সমস্তকিছুকেই সর্বদা ঘৃণা করবেন—আর এই মনোভাব কখনই বদলাবে না।

ঈশ্বরের কাজকর্ম সম্পর্কে কেউ কখনই অবগত ছিল না, তাঁর কাজগুলিকে কেউ কখনো পর্যালোচনাও করেনি। উদাহরণস্বরূপ, ঈশ্বর যখন সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করেন, কে সে ব্যাপারে অবগত ছিল? এইভাবে, “আমি নীরবে মানুষের মধ্যে আসি, আর তারপর ভেসে চলে যাই। আমাকে কেউ কি কখনও দেখেছে?”-এর মত বাক্যগুলি এটাই দর্শায় যে বস্তুতই মানুষের আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রের ঘটনাগুলি গ্রহণ করার মতো ক্ষমতার অভাব রয়েছে। অতীতে, ঈশ্বর বলেছিলেন যে তিনি যখন সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করেন তখন, “সূর্য অগ্নিবৎ, চন্দ্র আলোকোজ্জ্বল।” মানুষ এখনও ঈশ্বরের সিয়োনে প্রত্যাবর্তন নিয়েই চিন্তামগ্ন রয়েছে বলে—যেহেতু তারা এখনও বিষয়টি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি—তাই ঈশ্বর মানুষের ধারণাগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে সরাসরি “সূর্য অগ্নিবৎ, চন্দ্র আলোকোজ্জ্বল” বাক্যটি উচ্চারণ করেন। ফলস্বরূপ, মানুষের পূর্বধারণাগুলি যখন ঈশ্বরের বাক্যসমূহের সঙ্গে সংঘাতে ছিটকে পড়ে, তারা দেখে যে ঈশ্বরের কাজগুলি কতই না বিস্ময়কর, আর তারা লক্ষ্য করে যে তাঁর বাক্যসমূহ সকলকের কাছে সুগভীর, অগাধ এবং অর্থোদ্ধারের অসাধ্য; এইভাবে, তারা বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে রাখে, আর নিজেদের অন্তরে সামান্য স্বচ্ছতা অনুভব করে, যেন ঈশ্বর ইতিমধ্যেই সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করেছেন, আর তাই মানুষ এই বিষয়টির প্রতি তেমন একটা মনোযোগ দেয় না। তারপর থেকে, তারা ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে, এবং ঈশ্বরের সিয়োনে প্রত্যাবর্তনের পর বিপর্যয় নেমে আসবে ভেবে আর দুশ্চিন্তা করে না। একমাত্র তখনই ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করে, অন্য কিছু নিয়ে বিবেচনা করার ইচ্ছাকে সংবরণ করে ঈশ্বরের বাক্যসমূহকে গ্রহণ করা মানুষের পক্ষে সহজ হয়ে ওঠে।

পূর্ববর্তী:  অধ্যায় ১০

পরবর্তী:  সংযোজন: অধ্যায় ২

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Connect with us on Messenger